Saturday, July 30, 2022

কুমড়া গোত্রীয় ফসলের বংশবিস্তার

 
কুমড়াগোত্রীয় ফসলের বংশবিস্তার

কুমড়া গোত্রীয় ফসলের বংশবিস্তার


সাধারণত যৌন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুমড়াগোত্রীয় ফসলের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ কুমড়াগোত্রীয় ফসলের ফুল অসম্পূর্ণ হওয়ায় পরাগায়নের জন্য অন্য মাধ্যম যেমন কীটপতঙ্গের প্রয়োজন হয়। পরাগায়ন ঠিকমতো না হলে ফল শুকিয়ে পঁচে বা ঝরে গিয়ে প্রায় ৯৫% ফলন কমে যেতে পারে। তখন হাত পরাগায়নের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন করিয়ে দিতে হয়। এজন্য কুমড়াগোত্রীয় ফুল কখন ফোটে এবং হাত পরাগায়ন কখন করতে হয় সে বিষয়ে আমাদের জানা প্রয়োজন।

শসা

শসার পুরুষ ফুল ফোটা বা বন্ধ হওয়া দিনের আলোর দৈর্ঘ্যরে সাথে সম্পর্কযুক্ত। পুরুষ ফুল সাধারণত সকালে ফোটে এরং পরাগরেণু দুপুর ২.০০টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ কর্মক্ষম থাকে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে নিস্ক্রিয় হতে থাকে। শশার স্ত্রীফুলও সকালে ফোটে তবে ফুল ফোটার ২ ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করতে হবে। কেননা গর্ভমুন্ডে খুব কম সময়ের জন্য কর্মক্ষম থাকে।


করলা

করলার ফুল ভোর ৪.০০টা থেকে সকাল ৭.৩০টা এর মধ্যে ফুটতে শুরু করে এবং সকাল ৬.০০ টা থেকে সকাল ৯.৫৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে ফুটে যায়। পুরুষ ফুলের পরাগধানী সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৮.৫৫টা পর্যন্ত পরাগরেণু উন্মুক্ত করে। তাই সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৯.০০টার মধ্যে করলার কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গর্ভমুÐের ধারণক্ষমতা সাধারণত ফুল ফোটার ৮ ঘণ্টা আগে থেকে ফুল ফোটার ১২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।

লাউ

লাউ ফসলের ফুল সকাল ৯.০০টা থেকে ফুটতে শুরু করে এবং বিকাল ৪.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল প্রস্ফুটিত হয়। পরাগধানী সকাল ১১.০০টা থেকে ২.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত করে। লাউ ফুল ফোটার পর অল্প সময় খোলা থাকে ফলে লাউয়ের পরাগায়ন বিকাল ৪.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০টার মধ্যে করতে হবে।
আরেকটি সুস্বাদু ফল খরমুজের ফুল ফোটার সময় সকাল ৫.৩০টা থেকে সকাল ৬.৩০টা।পরাগধানী সাধারণত সকাল ৫.০০টা থেকে ৬.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত করে এবং রেণু সকাল ৫.০০টা থেকে দুপুর ২.০০টা পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে। গর্ভমুÐের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ২ ঘণ্টা আগে থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। ফলে খরমুজের কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৫.০০টা থেকে সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।

পটোল

পটোলের ফুল সাদা। পটোলের পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ আলাদা। পটোল একটি উচ্চমাত্রার পর-পরাগায়ন ফসল। এজন্য স্ত্রী এবং পুরুষ গাছের অনুপাত হতে হবে ৯:১ অথবা ১০:১। পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের ১৫ থেকে ২৯ দিন পর জন্মায়। তাই পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে রোপণ করতে হয়। পটোল ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন ভোর ৫.০০টা থেকে সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হয়।

ঝিঙে

ঝিঙে ফুল বিকালের দিকে ফোটে। ফুল ফোটার সময় সাধারণত বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে। পরাগধানী পরাগরেণু বিকাল ৫.০০টা থেকে ৮.০০টা এর মধ্যে উন্মুক্ত করে। পরাগরেণুর কর্মক্ষমতা ফুল ফোটার দিন সবচেয়ে বেশি থাকে এবং ২-৩ দিন পর্যন্ত এটা স্থায়ী হয়। গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে ফুল ফোটার ৮৪ ঘণ্টা পর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে ফুল ফোটার দিন বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ঝিঙে ফুলের পরাগায়ন করিয়ে দিতে হবে।

চিচিঙ্গা

সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে চিচিঙ্গা ফুল এবং স্ত্রী ফুল ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুটে যায়। পুরুষ ফুলের ফুটতে ১৯ মিনিট থেকে ৩৩ মিনিট সময় লাগে। বিকাল ৪.০০টা থেকে ৫.০০টার মধ্যে পরাগধানী ফাটতে শুরু করে এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত হয়। চিচিঙ্গা ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৯.০০ টার মধ্যে করতে হবে।

কাঁকরোল

কাঁকরোলের পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে ধরে এবং পুরুষ গাছে কুড়ি ধারনের ১৫দিন পরে ফুল ফোটে এবং স্ত্রী গাছে ফোটে ১০ দিন পর। তাই পুরুষ গাছ আগে লাগাতে হয়। কাঁকরোল পুরুষ ফুল ভোর ৪.০০ টার সময় ফুটতে শুরু করে। স্ত্রী ফুল সকাল ৬.০০টা থেকে ৬.২০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে। সকাল ৫.০০টা থেকে ৬.০০টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। ফুল ফোটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করলে ৬৪% পর্যন্ত ফল ধারণ করে। ১২ ঘণ্টার উপরে গেলে ফল ধারণ ১৭% এর নিচে চলে আসে। এজন্য ফুল ফোটার সাথে সাথে পরাগায়ন করে দিতে হবে।

মিষ্টি কুমড়া

মিষ্টি কুমড়া ফুল ভোর ৩.০০টা থেকে ভোর ৪.০০টা পর্যন্ত ফুটতে শুরু করে এবং ভোর ৫.০০টা থেকে ৬.০০ টার মধ্যে সর্বোচ্চ ফুল ফোটে। ফুল সাধারণত ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। ফুটন্ত ফুল সকাল ৮.০০টা থেকে বন্ধ হওয়া শুরু করে এবং ১১.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।


চাল কুমড়া

চাল কুমড়ার পুরুষ ফুল সাধারণত ভোর ৪.৩৩টা থেকে ভোর ৪.৪৫টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট এর মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। স্ত্রী ফুল ভোর ৪.২০টা থেকে ভোর ৪.৩০টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট এর মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। পরাগধানী সাধারণত রাত ১.৪৫টা থেকে ২.৪০টা এর মধ্যে ফাটতে শুরু করে এবং গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে ১৬ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। পরাগরেণু ফুল ফোটার ২০ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সজীব থাকে। চাল কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯.০০টার মধ্যে করতে হয়।

তবে কৃত্রিম পরাগায়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল দুটি যেন একই সময় ফুটেছে এমন ফুল নির্বাচন করা হয়। বড় ক্ষেত হলে স্প্রে মেশিনে পানি নিয়ে পরাগরেণু মিশিয়ে স্প্রে করা অথবা ড্রপার দিয়ে ফুলে পানির ফোটা দেয়া। তাহলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যদি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম পাথুরে চুন এবং ৩ গ্রাম বোরন সার মিশিয়ে পরপর ৩ দিন বিকালে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দেয়া হয় তাহলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা কমে যাবে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।

কাজেই আমরা যদি সঠিক সময় নির্ধারণ করে কুমড়াগোত্রের ফসলগুলোর কৃত্রিম পরাগায়ন করতে পারি তাহলে অধিক ফলন পাবো এবং আর্থিকভাবে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা লাভবান হবেন।



Friday, July 22, 2022

সেলস, টেরিটরি, মার্কেটিং, প্রমোশন অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য


সেলস, টেরিটরি, মার্কেটিং, প্রমোশন অফিসারের  দায়িত্ব ও কর্তব্য

সেলস, টেরিটরি, মার্কেটিং, প্রমোশন অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য


 * মাসিক সভায় যোগ দেওয়।

* গ্রাহক এবং ডিলারদের সাথে নিয়োমিত যোগাযোগ করা।

* গ্রাহক এবং ডিলারের সাথে সু-সম্পর্ক বজায রাখা।

* গ্রাহক এবং ডিলারের একটি শক্তিশালী ডেটা বেস তৈরি করা।

* বসের কাছে বিভিন্ন দৈনিক ও মাসিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া।

* বিপণন কৌশল বাড়াতে অবদান রাখা।

* ব্র্যান্ড বাড়াতে বিপণন কার্যক্রম বা ইভেন্ট গুলির সংগঠিত করা এবং অংশগ্রহণ করা।

* কোম্পানির বিক্রয় কার্যক্রম, পরিকল্পনা এবং পদ্ধতি সম্পাদন করা।



* পণ্য প্রচার, মিটিং, ডেমো, কৃষক পরিদর্শন, মাঠ পরিদর্শন এবং বাজার ব্যবস্থা উন্নত করতে বিপণন দলকে সহায়তা করা।

* বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পাশাপাশি একটি নতুন লক্ষ্য তৈরি করা।

* পণ্য জ্ঞান এবং বিক্রয় কৌশল সম্পর্কে আপডেট রাখা।

* ম্যানেজমেন্টের বা বসের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অন্য কোন কার্যক্রম করা।

* বসের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখা ।

* যে কোন প্রয়োজনে আগে রিপোটিং বসকে বলা।

Monday, July 18, 2022

ছত্রাকজনিত রোগ

ভাইরাল রোগ


ভাইরাল রোগ

এফিডগুলি বিন কমন মোজাইক ভাইরাস (বিসিএমভি), বিন কমন মোজাইক নেক্রোসিস ভাইরাস (বিসিএমএনভি), এবং বিন ইয়েলো মোজাইক ভাইরাস (বিওয়াইএমভি) বহন করে, যা বীজের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে। BCMV বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। গাঢ় এবং হালকা সবুজ নিদর্শন flecked সঙ্গে পাতা; পাতা বিকৃত হতে পারে; পাতায় হলুদ দাগ দেখা যেতে পারে; গাছের বৃদ্ধি মন্থর হতে পারে। ভাইরাসটি সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ফসল, শোভাময় এবং আগাছায় পাওয়া যায়।


ছত্রাকজনিত রোগ

সারকোস্পোরা পাতার দাগ

Cercospora Leaf Spot সারকোস্পোরা sp জীব দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি গাছের নীচের পাতায় অমসৃণ, ট্যান বিন্দু হিসাবে প্রদর্শিত হয়। অত্যধিক পাতা ঝরা এবং গাছের ক্ষয় একটি গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ। দীর্ঘায়িত বৃষ্টি, উচ্চ আর্দ্রতা এবং 75 থেকে 85 ফারেনহাইট তাপমাত্রার কারণে সংক্রমণ আরও খারাপ হয়। রোগমুক্ত বীজ দিয়ে রোপণ করা উচিত। ফসল কাটার পরে, বাগান থেকে সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলুন। দুই থেকে তিন বছরের জন্য, একই জায়গায় শিম লাগাবেন না। বাড়ির বাগানে, এই রোগের জন্য কোন প্রতিরোধী প্রকার বা সুপারিশকৃত রাসায়নিক নেই

Friday, July 8, 2022

মাছের ফুলকা পঁচা রোগ

 

মাছের ফুলকা পঁচা রোগ


মাছের ফুলকা পঁচা রোগ


আক্রান্ত মাছ: কার্প জাতীয় মাছ। পোনা মাছে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।



রোগের কারণ:* সাধারণত গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে গেলে ব্রস্কিওমাইসিস নামে এক জাতীয় ছত্রাক মাছের ফুলকায় বাসা বাঁধে এবং রক্তবাহী শিরাগুলি বন্ধ করে দেয়।

* পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এ রোগ দেখা দেয়।

* অধিক ঘনত্ব, তলদেশে জৈব পদার্থ জমা হওয়ায় দূষণের ফলে এ রোগ হয়।


রোগের লক্ষণ: 

* রক্ত জমাট হয়ে ফুলকা ফুলে যায়।

* ফুলকা চিরুনির উপর লাল ছিট ছিট দাগ দেখা যায়। পরবর্তীকালে এগুলি ঈষৎ ধূসর সাদা রঙের এবং ফুলকার গোড়ার হাড়টুকু বাদ দিয়ে পুরো ফুলকাটি খসে পড়ে।

* অনেক তরল পদার্থ বের হওয়া।

* মাছের শ্বাস কষ্ট হওয়া* শরীরের মিউকাস কমে যাওয়া।

* স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য থাকে না।* রক্তশূন্যতা এবং রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।



প্রতিরোধ ও প্রতিকার:

* পুকুরের পানি দ্রুত পরিবর্তন করা ও সার ও খাবারের পরিমান কমিয়ে দেওয়া সেই সাথে লক্ষ্য রাখবেন যেন পুকুরে কোন জৈব পদার্থ জমতে না পারে ।

* ২.৫% লবণ পানিতে বা ৫ পিপিম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা গোসল করাতে হবে।

* প্রতি কেজি খাবারের সঙ্গে ১-২ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।

* শতাংশে ৫০০ গ্রাম হারে পাথুরে চুন পুকুরে প্রয়োগ করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

Saturday, July 2, 2022

চাল


 

চাল

বর্তমানে আমাদের অসংখ্য রোগের নেপথ্য কারন চাল। সবাইকে ভাত কম খেতে বলা হয়, ডায়াবেটিস হলে খুবই কম খেতে বলা হয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রধান খাদ্য ছিল ভাত কিন্তু তারা আমাদের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতো না। তাই আজকের আলোচনা চাল নিয়ে।

চালে প্রায় ১২% জল, ৭৫-৮০% কার্বোহাইড্রেট, ৪ থেকে ৯% প্রোটিন এবং প্রায় ০.২ থেকে ০.৯% ফ্যাট থাকে।

চালের উপরের স্তরে ফাইবার, ভিটামিন, পলিফেনল, মিনারেল, অ্যান্টি_নিউট্রিয়েন্ট প্রভৃতি থাকে। চালে ফাইবার প্রায় শূন্য ( বাজারের সাধারণ চাল) থেকে শুরু করে ১.৬ % ( ব্রাউন রাইস) পর্যন্ত হতে পারে। এই স্তরেই প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। চালের যতো ভিতরে যাওয়া যায় ততই প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ কমে এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়ে।

এখন চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স নিয়ে আলোচনা করা যাক। চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স মাত্র ৩৯ থেকে শুরু করে ৮৪ ও হতে পারে। চালের কার্বোহাইড্রেটের স্টার্চ দুই রকমের অ্যামাইলোজ ও অ্যামাইলোপেকটিন। চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স এই অ্যামাইলোজের উপর নির্ভরশীল, অ্যামাইলোজ বাড়লে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। চালে অ্যামাইলোজ ২% ( স্টিকি বা আঠালো ভাত) থেকে ২৭% পর্যন্ত হতে পারে। তাই যে ভাত ঝরঝরে তার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। যে চালে অ্যামাইলোজ বেশি থাকে সেগুলো সাধারণত লম্বা হয় কিন্তু সর্বদা সঠিক নয়।



ধান সিদ্ধ করলে ফাইবারের স্তর থেকে মিনারেল, ভিটামিন, পলিফেনল, লিপিড ( ফ্যাট) প্রভৃতি চালের ভিতরের দিকে চলে যায় অর্থাৎ চালের পুষ্টিগুণ বাড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে অ্যামাইলোজ ও লিপিডের বন্ধনের ফলে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স অনেক কম হয়ে যায়। এছাড়াও ধান সিদ্ধ করার জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টি নিউট্রিয়েন্ট কিছুটা কমে যায়। তাই আতপ চালের তুলনায় সিদ্ধ চাল অনেক ভালো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে সিদ্ধ করার আগে ধানকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে যাতে জল ধানের একদম ভিতরের স্তরেও পৌঁছাতে পারে।

যেকোন বীজকে জার্মিনেশন করলে তাতে অ্যান্টি নিউট্রিয়েন্ট একদম কমে যায় এবং কিছু উপকারী যৌগ তৈরি হয়। তাই যদি ধানকে জার্মিনেশনে রেখে কল বের হওয়া শুরু হতেই সিদ্ধ করা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়।

চালে ফাইবারের পরিমাণ বাড়লে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। এছাড়াও পলিফেনল, ভিটামিন, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেলস আমাদের আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি। তবে এইসবের পরিমাণ অনান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় কম। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে চালের মধ্যে এইসব উপাদান বৃদ্ধি পায় এবং আর্সেনিকের পরিমাণ কম হয়।

ছোটবেলায় একজনের কাছে ভাতের বর্ণনা শুনেছিলাম -- "গাবের বীচির মতো শক্ত, ঝরঝরে ও একবার খেলে সারাদিন খিদে পায় না "। এর অর্থ হচ্ছে এই চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স খুবই কম।
তাই সবচেয়ে ভালো চাল হচ্ছে যাতে অ্যামাইলোজ বেশি আছে ( অর্থাৎ ঝরঝরে ভাত, বিন্দুমাত্র আঠালো নয়), ফুল ফাইবার, উপরে লেখা জার্মিনেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা ও সিদ্ধ চাল।



এছাড়াও ভাত বানানোর পরে ফ্রিজে রেখে বা এমনিই ঠান্ডা করলে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়।
এই ধরনের চাল ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারে। তবে চালের পুষ্টিগুণ সমস্ত খাদ্যশস্যের মধ্যে কম তাই অনান্য ধরনের খাদ্যশষ্যও গ্রহণ করা উচিত। বর্তমানে ডায়াবেটিস এর একটা অন্যতম কারন গমের গ্লুটেন ( কালো গমে গ্লুটেন নেই) । তাই এই ধরনের চাল, বিভিন্ন মিলেট ও কালো গম লোকজন খেলে শরীর ভালো থাকবে। উপরে লেখা পদ্ধতি অনুসারে তৈরি করা বাসমতী চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বিভিন্ন চালের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বাংলার অন্যতম সমস্যা ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহারের কারনে জমির মাটিতে বছরের পর বছর আর্সেনিক জমা হওয়া এবং সেটা বিভিন্ন ফসলের মাধ্যমে শরীরে ঢোকা। যেহেতু ফাইবারের স্তরে আর্সেনিক সবচেয়ে বেশি থাকা তাই এইসব অঞ্চলে উৎপাদিত ধানের চালে ফাইবার রাখলে সেটা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বর্ষাকাল ছাড়া সর্বত্র ধানচাষ নিষিদ্ধ করাই একমাত্র উপায়।


Rashed Hasan

Jhenida, Dhaka, Bangladesh


Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...