Wednesday, August 31, 2022

গোড়া পচা রোগ

 

গোড়া পচা রোগ





গোড়া পচা রোগ/ ডেমপিং অফ

*রোগের কারণ: ছত্রাক

*ক্ষতির ধরণ :

চারার গোড়া বা শিকড় পচে ঢলে পড়ার মাধ্যমে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত চারার গোড়ার চারদিকে বাদামি বর্ণের পানিভেজা দাগ দেখা যায়। আক্রমণের দুই দিনের মধ্যে চারা গাছটি ঢলে পড়ে ও আক্রান্ত অংশে তুলার মতো সাদা মাইসেলিয়াম দেখা যায় ও অনেক সময় সরিষার মত ছত্রাকের অনুবীজ পাওয়া যায়। চারা টান দিলে সহজে মাটি থেকে উঠে আসে।

*ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়, চারা;

*ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : শিকড়, গোঁড়া;


*ব্যবস্থাপনা :

জমি শেষ চাষের সময় বিঘা (৩৩ শতাংশ) প্রতি ৮-১০ কেজি  ট্রাইকোডার্মা সমৃদ্ধ "বায়োডার্মা সলিড" মাটিতে ছিটিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে।

আক্রান্ত গাছের ক্ষেত্রে ৩-৫ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা সমৃদ্ধ "বায়োডার্মা পাউডার" এক লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থান, মাটিসহ গাছের গোড়া ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

এছাড়া ধানের ব্লাস্ট, ধানের সিথ ব্লাইট, ঢেঁড়শ ও পুঁইশাক -এর সারকোসপোরা লিফ স্পট, মরিচের এনথ্রাকনোজ, শিম ও চায়ের রেড রাস্ট, ফিউজেরিয়াম উইল্ট, চারা গাছের ঢলে পড়া, কলার সিগাটোগা, বেগুনের স্টেম ব্লাইট ইত্যাদি রোগ দমনে জৈব বালাইনাশক "বায়ো-শিল্ড" ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।


*পূর্ব-প্রস্তুতি :

একই জমিতে বার বার কপিজাতীয় ফসল চাষ করবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় ছায়া পড়ে এমন জমিতে কপিজাতীয় ফসল চাষ করবেন না। পরিমিত সেচ ও পর্যাপ্ত জৈব সার প্রদান করুন। পানি নিস্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখুন।  লাল মাটি বা অম্লীয় মাটির ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি চার কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করুন (প্রতি তিন বছরে একবার)।

ধানের ক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম "বায়োডার্মা পাউডার" ১ কেজি বীজ জাগ দেওয়ার পূর্বে ভেজানোর সময় শেষবারের পানিতে মেশাতে হবে।

সবজির ক্ষেত্রে ৫ গ্রাম "বায়োডার্মা পাউডার" ১০ গ্রাম বীজের সাথে পেস্ট করে মিশিয়ে নিতে হবে।

চারা শোধনের ক্ষেত্রে "বায়োডার্মা পাউডার" ১০ গ্রাম প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে চারার শিকড় ১০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে।

"আসুন বিষমুক্ত ফসল আবাদ করি, সুন্দর পৃথিবী গড়ি"

Friday, August 19, 2022

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য



গ্রামবাংলার ঐতিহ্য


গ্রামবাংলার ঐতিহ্য

 উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নাটোর লালপুর কৃষিতে দিন দিন যুক্ত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি। ফলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মানব সভ্যতার সোনালী অতীত-ঐতিহ্য গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা গরু-লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য। উত্তর জনপদে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ এখন শুধুই স্মৃতি।


এক সময় দেখা যেত সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য। বর্তমানে আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আর সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে আর দেখা যায় না কৃষকদের।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙল, জোয়াল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হাল চাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করত হাল চাষ করার জন্য। আবার অনেকে গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন। আবার অনেকে,আখ,পাট, ধান গম, ভুট্টা, তিল, সরিষা, কলাই, আলু প্রভূতি চাষের জন্য ব্যবহার করতেন।

নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। আগে দেখা যেত কাকডাকা ভোরে কৃষক গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেড়িয়ে পড়ত। এখন আর চোখে পড়ে না সে দৃশ্য। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ।

হাল চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠের তৈরি লাঙল, বাঁশের তৈরী জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি।
আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈবসার হতো। ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। এখন নতুন নতুন আধুনিক বিভিন্ন মেশিন এসেছে সেই মেশিন দিয়ে এখানকার লোকজন জমি চাষাবাদ করে। তাই এখনো গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হাল চাষ করা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

গরুর লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬৬ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক কম লাগতো। দিনে দিনে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য।

BY



Monday, August 15, 2022

ধানে নতুন এক ধরনের রোগ

 

বাংলাদেশের ধানে নতুন এক ধরনের রোগ দেখা যাচ্ছে

রোগটি হলো-
ধানের ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট
(Bacterial Penicle Blight)
রোগের কারনঃ
Burkholderia Glumae নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট ব্যাকটেরিয়া জনিত দানা পঁচা রোগ বা দানা পঁচা নামেও পরিচিত।
ব্যাকটেরিয়াটি হলুূদ পিগমেন্টেড বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিন উপাদান নিঃসৃত করে ফলে এই রোগ ছড়ায় এছাড়া আদ্রর্তা ৮০ শতাংশের বেশি খুব ঘন আকারে চারা রোপন ও অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের ফলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
রোগের লক্ষণঃ
Bacterial Penicle Blight
( ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট)
এই রোগ কোন পুর্ব সতর্কতা ছাড়াই লক্ষণ গুলির উপস্থিতি দেখা যায়। শিষের ছোট ছোট ধানগুলো সঠিকভাবে দানা বাধতে পারেনা এবং চিটা হয়ে যায় তবে শিষের সকল দানা কিন্তু চিটা হয়না। আক্রান্ত ধানের দানা গুলো ধুসর/ কালো/ গোলাপি রঙ ধারন করে।

শিষে চিটা হওয়ার ফলে দানায় কোন ওজন থাকেনা ফলে আক্রান্ত শিষ খাড়া হয়ে থাকে। সংক্রমিত শীষের নীচের অংশ সবুজ থাকে। মাঝে মাঝে খোলপচা বা চারা ঝলসানো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ক্ষেতের
বিভিন্ন জায়গায় গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি জায়গায় এক বা একাধিক গাছে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
Bacterial Penicle Blight
(ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট)
কিভাবে ছড়ায়ঃ ব্যাকটেরিয়াগুলো ধানগাছের পাতা এবং খোলে অবস্হান করে এবং তারা প্রতিকুল পরিবেশেও সক্রিয় ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। ধান গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াগুলো গাছের উপরের দিকে উঠতে থাকে। ব্যাকটেরিয়াটি ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে শীষে আক্রমণ করে। ফুলে রেনুগুলো নষ্ট করে পরাগায়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ফলে ধানের দানা গুলো চিটায় পরিনিত হয়। ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট সাধারনত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়াতে বেশি ছড়ায়। যখন দিনের তাপমাত্রা ৩২ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এই রকম আবহাওয়াতে রোগ ছড়ানোর উপযুক্ত। এছাড়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের ফলে এ রোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

Bacterial Penicle Blight
(ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট)
বাহকঃ ব্যকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট একটি বীজ বাহিত রোগ। রোগাক্রান্ত বীজ হতে চারা উৎপাদন করে আবাদ করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের বাস্তবিক কোন উপায় নেই।
Bacterial Penicle Blight (BPB)
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট(বি পি বি)
দমনে সমন্বিত বালাই ব্যাবস্হপনাঃ
১. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি যেমন বীজ শোধন করার বিকল্প নেই।
২. বীজ বপনের পুর্বে ৫/৬ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নেওয়া।
৩. অক্সালিনিক এসিড/ ট্রাইকোডার্মা দিয়ে বীজ শোধন করা।
৪.রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষাবাদ করা। জাপান ৯টি ও আমেরিকা ৬ ধান গবেষণা কেন্দ্র BPB প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবন করছে।
৫. অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যাবহার না করা।
৬. কপার অক্সিক্লোরাইড/ কপার হাইড্রোঅক্সাইড জাতীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

Wednesday, August 10, 2022

আগাম ফুলকপি চাষের জমি প্রস্তুত প্রনালি

 
আগাম ফুলকপি চাষের জমি প্রস্তুত প্রনালি

আগাম ফুলকপি চাষের জমি প্রস্তুত প্রনালি।

যারা এই সময় আগাম জাতের ফুলকপি /বাধাকপি চাষ করতে চাচ্ছেন তারা দ্রুত জমি প্রস্তুত করে নিয়ে বেড তৈরি করে ফেলুন,তাহলে বৃষ্টি হলেও চারা রোপন করতে পারবেন খুব সহজেই।
ভাল ভাবে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ফিনিশিং দিয়ে নিতে হবে,প্রথম চাষের সময় গোবর বা ভার্মিকম্পোস্ট সার ছিটিয়ে দিতে হবে।শেষ চাষের সময় প্রদত্ত সার গুলো ছিটিয়ে দিয়ে ফাইনাল চাষ দিবেন।
৩৩ শতাংশ জমির জন্য~

টিএস পি ৫০ কেজি
এমও পি ৩৫ কেজি
জিপসার ১০ কেজি
বোরন ১-২ কেজি
ম্যাগ্নেশিয়াম সালফেট -২ কেজি
দানাদার কীটনাশক ২ কেজি।
দস্তা ১.৫ কেজি (বেড তোলার আগে)

বেডের সাইজ
লাইন-লাইন- ২৩/ ২৪ ইঞ্চি
চারা থেকে চারা ১৬-ইঞ্চি (আগাম জাতের জন্য)
বেড তুলে অন্তত ২-৩ দিন রেখে দিবেন যেন মাটিটা বসে যায়,এতে চারা রোপন করলে চারা কম কাটবে।
পরিশেষে ২৫ দিনের সুস্থ সবল কোকোপিট এর চারা,না পেলে মাটির বেডের চারা রোপন করে দিবেন। চারা রোপনের ২ দিন পর পর্যন্ত সকাল বিকাল পানি দিবেন (যদি বৃষ্টি না হয়), তারপর ঢালা শেষ দিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপন এর ১৫-দিন পর প্রথম ডোজ সার দিয়ে দিতে হবে।
এটি আমার নিজস্ব চাষাবাদ পদ্ধতির আলোকে লিখলাম,জায়গা,অঞ্চল,মাটি ভেদে সারের মাত্রা কম বেশি হতে পারে।


Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...