Saturday, October 21, 2023

নতুন খামারিদের জন্য পরামর্শ

 

বিসমিল্লাহির রাহ-মানির রাহীম। পরম দয়াময় আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি।

সম্মানিত সুধীবৃন্দ,

নতুন খামারিদের জন্য  পরামর্শ


নতুন খামারিদের জন্য বহুমাত্রিক পরামর্শ জনিত পোস্ট

যারা নতুন খামার করার উদ্যোগ নিয়েছেন বা নিবেন তাদের জন্য বলছিঃ

First of all,আপনাকে এই বিষয়টি ভালোভাবে ভেবে নিতে হবে, আপনি যা করতে চাচ্ছেন তা আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা।যদি আপনি মনে করেন কাজটি আপনার জন্য Perfect, আপনি সরাসরি খামারের কাজে নিযুক্ত হতে চান তা হলে আপনার জন্য পরামর্শঃ

পরামর্শ :-

১. আপনাকে অবশ্যই গবাদি পশু বিষয়ক তিন মাসের একটি Training নিতে হবে।

২য়:- প্রশিক্ষন শেষে আপনাকে অবশ্যয় অন্যের খামারে কিছু দিন কাজ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে কেন না।কেন নয় Training শুধু আপনার সহায়ক হিসাবে কাজ করবে।

৩য়:- আপনাকে অবশ্যয় গবাদিপশুর খাদ্য নিরাপত্তা(অর্থাৎ,উন্নত জাতের ঘাসের চাষ) এবং বাসস্থানের সুব্যবস্থা করতে হবে।

৪র্থ:-উপরোক্ত কাজ গুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের পর আপনাকে গবাদি পশুপালনের একটি Circle সাজাতে হবে এবং সেই সার্কেলের উপযুক্ত গরু নির্বচন করতে হবে যাতে আপনি খামারের মোনাফা দিয়ে খামার চালাতে পারেন।

৫ম:- আপনাকে দুইটা উন্নত জাতের ফ্রিজিয়ান গাভি নিতে হবে দেখে শুনে ১/২য় বিয়ানের সাথে দুই টা Pregnent ৫/৬ মাসের ফ্রিজিয়ান গাভি নিতে হবেপ্রথম বাচ্ছা দিবে এমন গরু এবং দুই টা ১০/১২বয়সের ফ্রিজিয়ান ভাল মানের বকনা নিতে হবে(দালাল হতে সাবধান)

(সময় স্বল্পতার কারনে)আমি পুরো বিষয়টা explain করে আপনাদের বুঝাতে পারছি না।


২য় পরামর্শ প্রথম দুই টা ভাল মানের গাভি নিবেন সাথে দুই টা ১১/১২মাস বয়সি বকনা দিবেন যখন দেখবেন আপনার গাভি গাভ হয়ছে ও দুধ কমে গেছে দুধের টাকায় খামার চলে না ঠিক সেই মুহুর্তেআপনাকে আরো দুইটি গাভি নিতে হবে যাতে আগের গাভি দুইটি বাচ্ছা দেয়ার আগ পযন্ত পরের গাভির দুধের টাকা খামার চালাতে পারেন।


আল্লাহ্‌রহম করলে ২/৩মাস পর প্রথম দুই টা গাভি বাচ্ছা দিবেন এবং প্রথম কিনা ১১/১২মাস বয়সি বকনা  ও ৩/৪মাস এদিক সেদিক বাচ্ছা দিবে তখন আপনার খামারে এমনিতেই একটা সারর্কেল হয়ে যাবে।

চাকরিজীবী ভাইদের জন্য খামার করার পরামর্শ।

যে সব চাকরিজীবী ভাই মোটামোটি ভাল টাকা ইনকাম করেন।যাদের বাড়িতে কাজ করার মত লোক আছে ছুট ভাই না অন্য কেউ তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে।

১ম:- একটা গাভি নিতে হবে ভাল জাত মান দেখেসাথে দুই টা বকনা ১১/১২মাস বয়সেরএবং পরে আরেক টা গাভি নিতে হবে।যাতে খামারের টাকা দিয়ে খামার চালাতে পারেন।

যার স্বল্প বেতনের চাকরি করে তাদের জন্য পরামর্শ।

চাকরির পাশাপাশি-১ম:- আপনারা  ঋন করে গাভি কিনার চিন্ত মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।

আপনারা নিজ নিজ বাড়িতে স্বল্প মূল্যে একটা বা দুই ৯/১০মাসের বকনা কিনে খামার শুরু করেন 

তখন সময় বলে দিবে আপনাকে কি করতে হবে।ছাত্র ছাত্রিদের জন্য পরামর্শ -যারা গ্রাম অঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য।তোমরা লেখা পড়ার পাশাপাশি একটা দুইটা বকনা বা একট গাভি পালন শুরু কর,যাতে তোমার লেখাপড়ার খরচটা দুধ বিক্রির টাকা থেকে আসে।কোন এক সময় তোমার লেখাপড়া শেষে চাকরি পাওয়ার জন্য অন্যের পেছনে ঘোরতে না হয়।আল্লাহ্‌ চাহেতো তুমি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ।

আপনারা যারা পারিবারিক ভাবে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি দেশি গরু পালন করেন।আপনারা ৩/৪টা দেশি গরুর পরিবর্তে একটা উন্নত জাতের একটা গাভি অথবা একটা বকনা পালন করেন।আল্লাহ্‌রহম করেতো ৩/৪বসর পর দেখবেন আপনার  এমনিতেই খামার হয় গেছে ইনশাআল্লাহ্‌।

বেকার ভাইদের জন্য পরামর্শ-

যারা ফ্রেমিলিতে থেকে কিছু পুঁজি নিতে পারবেন।আপনার প্রথমে একটা গাভি নিবেন,যখন দেখবেন আপনার গাভি গাভ হয়ছে দুধ কমে গেছে তখন আরেকটা গাভি নিবেন ইইনশাল্লাহ ২/৩বছরের মধ্যেই আপনি ভাল খামারি হতে পারবেন।

দূর হবে বেকারত্ব।

যারা পড়াশুনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে টিউশনি করে দিন কাটাচ্ছেন তাদের জন্য পরামর্শ।আপনাদের কিছু কিছু করে জমানো টাকা দিয়ে টিউশানির পাশাপাশি একটা দুইটা ভাল জাতের বকনা পালন করেন।২/৩বসর পর দেখেন কি হয়।যারা একেবারেই গরিব কাজের  টাকায় সংসার চলান।আপনারা সমিতি থেকে লোন করে একটা ভাল মানের দুধের গাভি কিনেন, কাজ করে সংসার চালাবেনদুধের টাকায় কিস্তি দিবেন মাসিক।কিছু টাকা বেশি হলে জমা করে রাখবেন।কেন নয় আপনার গাভি যখন গাভ হবে সে কয়েক মাসের মধ্যেই দুধ দেয়া বন্ধ বা কমিয়ে দিবে তখন সেই জমানো টাকা আর গাভির বাচ্ছা টা বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দিবেন। ২/৩ বছর একটু কষ্ট করে দেখেন ইনশাআল্লাহ্‌ এই কষ্ট আর থাকবে না।

পরের অধীনে কাজ করেন(দিনমজুর)তাদের জন্য পরামর্শ :-

আপনাদের কাজের পাশাপাশি একটু কষ্ট হলে ওএকটা উন্নত জাতের গাভি বা বকনা পালন করোন।ইনশাআল্লাহ্‌ বেশি দিন আপনাদের পরের অধীনে কাজ করতে হবে না।

গৃহিণীদের জন্য পরামর্শ :-

আপনারা ঘরের কাজের পাশাপাশি পারিবারিক আয় বৃদ্ধির লক্ষে একটা উন্নত জাতের বকনা পালন করোন। 

প্রবাস আছেন তাদের জন্য পরামর্শ  :-

যদি আপনার বাড়িতে কাজ করার লোক থেকে থাকেতা হলে আপন ভাই বা ছেলে মা বাবা এমন নিজেস্ব কেউ।।তা হলে একটা ভাল মানের গাভি ও সাথে ৩/৪টা উন্নত জাতের বকনা কিনে দেন।এক দুই বসর পর যখন দেখবেন খামার ভাল একটা অবস্থানে আছে তখন আপনি দেশে চলে আসলে ও সমস্যা হবে না।১/২ বছর হয়ছে যারা প্রবাস আছেন তারা বাড়িতে ৩/৪টা ভাল মানের বকনা কিনে দেন ১১/১২মাসের

বকনার খরচ আপনাকে বহন করতে হবে যখন দেখবেন আপনার সব কটা বকনা গাভ হয়ছে আল্লাহ্‌র রহমতে বাচ্ছা ও দিয়ে ফেলছে তখন আপনি দেশে চলে আসেন,দেশে এসে আরো দুই  টা ভাল মানের গাভ  বকনা , বা ১১/২২মাস বয়সের দুই টা বকনা কিনেন।আশা করি খুব ভাল একটা অবস্থানে যেতে পারবেন।একটা কথা বলে রাখি কেউ আবেগ দিয়ে কিছু করবেন না।বলাটা সহজ করতে একটু কষ্ট করতে হয়।আপনাদের মনে রাখতে হবে এই কাজ করতে হলে মানুষের সমালোচনা শুনার মত মনভল থাকতে হবে।ধয্য শক্তি কঠোর সততা সৎপথে সৎকাজ করে লেগে থাকতে হবে ২/৩টা বছর।যারা প্রথমেই লাভের আশা করবেন তারা এই কাজ থেকে অনেক দূরে থাকবেন।

এখনি সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার।

আমার মতে নিজে বকনা কিনে গাভি বানাতে পারলে বেশি ভাল।।

অনেক কথা বললাম সব কথা লেখায় প্রকাশ করা যায় না।

Friday, October 20, 2023

সোনালি মিনিকেট চাল

 

সোনালি মিনিকেট চাল


সম্প্রতি সোনালি মিনিকেট চাল" নামে একটি চালের নামকরণ করা হয়েছে যাকে অনেকে ডায়াবেটিস রাইস বলে দাবি করছেন। এই চাল আবিষ্কার করেছেন জিন বিজ্ঞানী এবং ধান গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী। তাঁর মতে এই চালের ভাত খেলে রক্তে শর্করা এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।আসুন এই সোনালি মিনিকেট চাল এবং এর সাথে জড়িত ডায়াবেটিস রাইস সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করি।

 

সোনালি মিনিকেট চাল

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরি এই চালটি উদ্ভাবন করেছেন মূলত অন্যান্য সাদা বা চিকন চালের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য। যা মেশাতে হবে মূল চালের সঙ্গে ১৫ শতাংশ করে। এতে ওই সাদা চালের সুগার বাড়ার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। কিন্তু সেই চালের সঙ্গে যে সোনালি মিনিকেট মেশানো হয়েছে তা বোঝা যায় না।সোনালি মিনিকেট চাল, এটি পরে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অনুমোদন করে। তাঁর এইচকেজি এগ্রো থেকে প্রস্তুত বিশেষ এই চাল খেলে কার্বোহাইড্রেড এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সোনালী চালের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান হাজীপুর কৃষিঘর-এর ব্যবস্থাপক সৈয়দ নূর আহমদ দাউদ (সৌরভ) বলেন, সোনালী চাল উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত কঠোরভাবে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই এই চাল বাজারের অন্যান্য চালের চেয়ে আলাদা এবং কার্যকরী।রেনেটা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লো জিআই চালের দাম পড়বে প্রতি কেজি ১০০ টাকা। বিভিন্ন সুপার স্টোর ও ওষুধের দোকানে এটি পাওয়া যাবে।

© এছাড়াও ভারতের ছত্তিশগড়ের ‘চাপাতি গুরমাটিয়া’ শ্রেণির ধানের মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের গুণাবলির সন্ধান পাওয়া গেছে।

 

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস একটি ব্যাধি যা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন না থাকা বা অগ্নাশয়ে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদন না হওয়ার জন্য সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা। ইনসুলিন একটি হরমোন যা রক্তের মধ্যে বিদ্যমান গ্লুকোজ শুষে নেয় এবং শরীরে শক্তি জোগায়। মানুষ যখন খাবার খায় তখন অগ্নাশয় প্রাপ্ত গ্লুকোজ শুষে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদন করে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন থাকে না অথবা উৎপাদিত হয় না। অথবা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় তা শরীর গ্রহণ করে না। ফলে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজ জমা হয় এবং প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়। ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব দেখা দেয়।

© বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি হিসাব অনুযায়ী, এ দেশে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা আগামী ’৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ও ডায়াবেটিস খাবার

গ্লাইসেমিক একটি সংখ্যা সূচক যা রক্তে গ্লোকোজের পরিমাণ নির্দেশ করে। আমরা যা খাই রক্তে ২-৩ ঘণ্টা পর যে গ্লুকোজের পরিমাণ হয় তার পরিমাপকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বলে। এটি পরিমাপ করার জন্য, যে কোনও খাদ্য কে গ্লুকোজের সাথে তুলনা করা হয়, যা পয়েন্টে ১০০ হিসাবে গণনা করা হয়।

© ১৯৮০ সালে ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর গবেষক ডা. ডেভিড এ. জেনকিনস সর্বপ্রথম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স এর গাণিতিক হিসাব প্রবর্তন করেন। খাদ্যে গ্লুকোজের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে গ্লাইসেমিক সূচক তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয় যেমন: উচ্চ গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ৭০-১০০) যে খাদ্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। মধ্যম গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ৫৬-৬৯)। নিম্ন গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ৫৫ বা তারও কম), যা ধীর গতিতে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে।

 

১) উচ্চ গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ৭০-১০০):

 

যে সমস্ত খাবার খেলে দ্রুত গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক ওঠানামা করে, সেগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিক যুক্ত খাবার। যেমন- কর্নফ্লেক্স, মুড়ি, সাদা চাল, নুডলস, পনির, মিষ্টি কুমড়া, গোল আলু, পপকর্ন, আনারস, বাতাবিলেবু, ইত্যাদি।

 

২) মধ্যম গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ৫৬-৬৯):

 

যেসব খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিমিত করে, তাহলো মাঝারি সূচক যুক্ত খাদ্য। যেমন-তরল পানীয়, মিষ্টি ভুট্টা, কিসমিস, পাকা কলা, মধু, বাসমতি চাল ইত্যাদি।

 

৩) নিম্ন গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য (জি আই ০০- ৫৫ )

খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, তাহলো নিম্ন সূচক যুক্ত খাদ্য। যেমন- গম, যব, লাল চাল, মেটে আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, শিম, চীনাবাদাম, গাজর, ডাল, প্রায় সব ধরনের ফল, শাক সবজি। ফলের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য আপেল, কমলা লেবু, টমেটো, খেজুর, আঙ্গুর, ইত্যাদি।

 

 তাই নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক যুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিম্ন সূচকযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় শক্তি দেয়। এই ধরনের নিয়মিত খাবারের সাথে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। আপনার যদি ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস থাকে তাহলে এই খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে। ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াবে।

 

গ্লাইসেমিক সূচক পরিবর্তন হয়:

আঁশ যুক্ত খাদ্য গ্লাইসেমিক সূচক কমাতে সহায়তা করে। সাধারণভাবে বেশী রান্না করা বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে গ্লাইসেমিক সূচক বেড়ে যায়। একই ভাবে বেশী পাকা ফল বা সবজিতেও উচ্চ মাত্রায় গ্লাইসেমিক সূচক থাকে। আলু ভর্তায় আস্ত পোড়া আলুর চেয়ে উচ্চহারে গ্লাইসেমিক সূচক থাকে। সাদা চালে লাল চালের চেয়ে বেশী গ্লাইসেমিক সূচক থাকে।

 

ডায়াবেটিস রাইস:

যেহেতু সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৭০ বা তার চেয়ে বেশি, তাই বিজ্ঞানীরা মধ্যম ও কম গ্লাইসেমিক সূচক যুক্ত জাত বা প্রযুক্তি বা পদ্ধতি বের করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ধানের জাত ব্রি ধান-২৮ ও ব্রি ধান-২৯ যাদের গ্লাইসেমিক সূচক প্রায় ৫৬%।

© ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চের বিজ্ঞানীরা এবার এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। কারণ ডায়াবেটিসের সমস্যা এখন প্রায় সব ঘরেই। তাই নতুন কয়েকটি ধান তারা আবিষ্কার করেছেন, যা গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে তুলনায় অনেকটা নীচের দিকে থাকবে। এই ধানের জাতগুলোর নামগুলো যথাক্রমে ললাট ৫৩.১৭, বিপিটি ৫২০৪, সম্পদ ৫১ এবং সাম্বা মাশুরি ৫৩।

 

আসুন ডায়াবেটিকস রাইস নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান জানার চেষ্টা করি:

১) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, লম্বা আকৃতির চাল সিদ্ধ করলে তার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স মান ৮৩ থেকে কমে ৬৭ এ নেমে আসে। তাই, সিদ্ধ চালই ভালো।

২) সাদা চাল, বাসমতি চাল, বাদামি চাল, সিদ্ধ চালের জিআই মান যথাক্রমে ৭৩,৬৩,৬৮ ও ৩৮.

অর্থাৎ সিদ্ধ চাল অন্য চালের তুলনায় অধিক নিরাপদ।

৩) এছাড়াও বিআর-৩,বিআর-১১, বিআর ১৬, বিআর-২৬, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান ৪৭,ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৫০, ব্রি ধান ৫৩, ব্রি ধান ৬২,পাইজাম, নাজিরশাইল, চিনিগুড়া এর গ্লাইসেমিক ইডেক্স যথাক্রমে ৬৪.৪, ৬৮.২, ৪৬.৯,৭২.১,৫৯.৬,৭৭.৬, ৬৬.০, ৭২.১, ৬৭.০,৭১.৫, ৬৯.৩, ৭৭.৩, ৬৩.১, ৫৪.২, ৪২.০ ও ৭১.৭.

 

(সূত্রঃ বিভিন্ন গবেষণা পেপার থেকে সংগৃহীত)

৪) যে সমস্ত জাতের ধানে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, সেই সমস্ত জাতের ধানের চাল অধিক নিরাপদ।

৫) বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভাতের সাথে ডাল, সবজি মিশালে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ড্রামাটিক্যালি হ্রাস পায়।

৬) যে সমস্ত চালে এমাইলোজ বেশি থাকে, সে সমস্ত চালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে, ভাত ঝরঝরে হয়।

 

এখন তাহলে আমাদের কি করা উচিত?

১) সিংগেল পালিসড এক সিদ্ধ বা হাফ সিদ্ধ চাল খাওয়া,

২) ভাতের দ্বিগুণ ডাল বা সবজি জাতীয় খাবার খাওয়া

৩) একটি প্লেটের ০৪ ভাগের ০১ ভাগ ভাত, বাকি ০৩ ভাগ সবজি, ডাল ইত্যাদি দিয়ে সাজান।

তাই, ব্লাক রাইস, ব্রাউন রাইস, সোনালি রাইস এর পিছনে ঘুরে ঘুরে টাকা না ফুরিয়ে ভাতের সাথে সবজি, ডাল খাওয়ার অভ্যাস করি, টেনশন মুক্ত জীবন গড়ি।

Thursday, October 19, 2023

কৃষিতে সোনালী ভবিষ্যতের হাতছানি



 কৃষিতে সোনালী ভবিষ্যতের হাতছানি 



আমরা সকলেই জানি আমাদের এই পৃথিবীতে বহু প্রকারের ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব রয়েছে, এর মধ্যে যেমন  কিছু আছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তেমনি  কিছু আছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। আমাদের শরীরের মধ্যেও এই ক্ষতিকর এবং প্রতিরোধী(উপকারী)  ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে অনবরত যুদ্ধ চলছে।  ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কাছে যখন উপকারী ব্যাকটেরিয়া হেরে যায় তখন আমারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। তখন ডাক্তার সাহেব আমাদের বলেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। তখন ডাক্তার সাহেব নানান প্রকার ঔষধ ( এক প্রকার বিশ) লিখে আমাদের প্রেসক্রিপশন ভরিয়ে দেন।

 

আমাদের জমিতে আমরা  যখন ফসল ফলাই তখন এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে আমরা( কৃষি ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী)  নানা প্রকার রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করি। এর ফলে ফসলের বন্ধু ব্যাকটেরিয়াকে আমরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত  ধ্বংস করে চলেছি  অর্থাৎ ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলেছি।

এখন কীভাবে ফসলের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় তা-ই হবে আমাদের আলোচনার বিষয়। 


পাঁচ কেজি কাঁচা গবোর এবং পাঁচ কেজি গোমুত্র ১০০ কেজি পানির সাথে একত্রে গোলাতে হবে। আমরা জানি গবোরের মধ্যে শুধু মাত্র উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফার্মেন্টেসনের মাধ্যমে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতি ২০ মিনিটে দ্বিগুণ করা সম্ভব। উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য তাদের খাদ্য হিসাবে এই গোলানো গবোরের মধ্যে দিতে হবে দুই কেজি ডালের গুড়া( ব্যাসন) এবং এক কেজি আখের গুড়। ৪৮ ঘন্টা পরে এই ১০০ কেজি গোলানো গবোর ৯ টন গবোরের সম পরিমাণ উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করবে।  এই ১০০ কেজি গোলানো গবোর এক হাজার কেজি পানির সাথে মিলিয়ে জমিতে ব্যবহার করা হলে আর কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হবেনা। কারণ মাটিতে যখন এই কোটি কোটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করা হয় তখন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পরাজিত হয়ে মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।   এখানে আরও বলে রাখি এই তরল গবোর গাছে স্প্রে করা হলে কোনো প্রকার ছত্রাক নাশক  বা কীট নাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হবেনা। 

যারা কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা জানেন সমস্ত পৃথিবীর কৃষকেরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করে বিশ মুক্ত ফসল ফলাতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। ভারতে ড. সুভাষ পালেকর এই পদ্দতি প্রয়োগ করে স্বার্থক হবার ফলে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী উপাধি প্রদান করেছেন। SPK Agriculture লিখে গুগল সার্স দিলে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।  বাংলাদেশেও এই পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা তাহলে পিছিয়ে থাকবো কেনো? আসুন আমরাও------------


  প্রফেসর বিজন কৃষ্ণ মৃধা। 

নাজিরপুর, পিরোজপুর। 

Wednesday, October 18, 2023

ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

 

ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

ক্লাউড সিডিং (কৃত্রিম বৃষ্টিপাত) কৃষির জন্য আশীর্বাদ

যা আজ অসম্ভব, অচিন্তনীয়, কাল তা বাস্তবে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীরা তাদের মূর্খতাপূর্ণ গুণাবলীর কারণে অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছেন। সৃষ্টির রহস্যময় মর্ম উন্মোচন। এমনই একটি বিষয় নিয়ে আজকের পর্ব।

© খরা, বৃষ্টির অভাব, পানির স্তর কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে বেঁচে থাকার প্রধান উপায় কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয়। খরায় ক্ষেত ফাটল, ফসলের সবুজ পাতা বিবর্ণ, সোনালি ফসল সাদা হয়ে যায়, বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ছটার মতো, বিলীন হয়ে যায় কৃষকদের রঙিন স্বপ্ন। চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় আল্লাহর রহমতের দিকে। প্রভু অবশ্যই বান্দাকে নিরাশ করেন না কিন্তু তাই প্রভু সর্বদা বিষয়টা দেবেন কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। কারণ স্রষ্টা বান্দাকে বুদ্ধি দিয়েছেন। সেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যবহার করে নতুন কৌশল বের করা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক ধরনের কাজ।

© মানুষ আজ যা ভাবতে পারে, কাল বুঝতে পারবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য পরিবর্তনশীল জলবায়ুর অধীনে খরা-প্রবণ, খরা-প্রবণ এলাকায় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত নিঃসন্দেহে কৃষির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে। এবং কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তিকে "ক্লাউড সিডিং" বলা হয়।

প্রথমেই সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কি?

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হল প্রকৃতির উপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব দ্বারা সৃষ্ট বৃষ্টিপাত। এ জন্য প্রথমে মেঘ তৈরি করতে হবে; দ্বিতীয় পর্যায়ে, এই মেঘগুলিকে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় আনতে হয় এবং অবশেষে মেঘ গলে বৃষ্টিপাত হয়। যাইহোক, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সাধারণত আকাশে ভাসমান মেঘগুলিকে জলের ফোঁটায় পরিণত করে।

কিভাবে এই বৃষ্টিপাত হয়-

তুলা-সাদা মেঘ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ভেসে বেড়ায়। এটা মেঘের দেশ। মেঘ ভাসতে থাকে যতক্ষণ না তারা বৃষ্টিপাতের জন্য যথেষ্ট ভারী হয়। মেঘ যতই ঠাণ্ডা হোক না কেন, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকলেও, নির্দিষ্ট ওজন বা ঘনীভূত না হলে তারা বৃষ্টি হিসেবে পড়ে না। এবং ঘনীভবন প্রক্রিয়া প্রকৃতি নির্ভর।

© এবং কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে এই ঘনীভবন প্রক্রিয়াটি উল্লিখিত দুটি পদার্থের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। পদার্থগুলি ট্রপোস্ফিয়ারে মেঘের স্তরের উপরে উঠে বিমানের মাধ্যমে ছড়িয়ে। শুকনো বরফ বা সিলভার আয়োডাইড ঘনীভবনে অবদান রাখে। যাইহোক, শুকনো বরফ এবং সিলভার আয়োডাইডের ক্রিয়া করার পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। মাইনাস 78 ডিগ্রী তাপমাত্রায় শুকনো বরফ আশেপাশের জলের অণুগুলিকে কেলে পরিণত করে। অন্যদিকে, সিলভার আয়োডাইড, যা খুব হাইড্রোফিলিক বা হাইড্রোস্কোপিক পদার্থ হিসাবে পরিচিত, নিজেই কলাসে পরিণত হয়। যদিও কাজের প্রক্রিয়া ভিন্ন, কাজটি হল মেঘের কণাগুলিকে ভারী করা এবং যখন কণাগুলি ওজনের কারণে বাতাসে আর থাকতে পারে না, তখন তারা ক্যাচমেন্ট এলাকায় নেমে আসে।

ক্লাউড সিডিংয়ে কীভাবে বৃষ্টিপাত হয়:

এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাতের জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়।

1) প্রথম পর্যায়ে যেখানে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয় সেখানে রাসায়নিক ব্যবহার করে মেঘ তৈরি করা হয়। ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ইউরিয়া এবং লবণের রাসায়নিক মিশ্রণ বা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সাথে ইউরিয়া মিশিয়ে তৈরি করা রাসায়নিক মেঘ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিক বায়ু থেকে আর্দ্রতা আহরণ করে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু করে।

2) দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসায়নিকের সাহায্যে মেঘ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় টেবিল লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড, -1 সূত্র, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, শুকনো বরফ এবং কখনও কখনও ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। এর ফলে মেঘ দ্রুত ঘনীভূত হয় এবং পতনশীল অবস্থায় পৌঁছায়।

3) তৃতীয় পর্যায়ে, বিমানের সাহায্যে, সিলভার আয়োডাইড স্ফটিক (বা কখনও কখনও চূর্ণ শুকনো বরফ) মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে মেঘের মধ্যে থাকা আর্দ্রতাকে বড় জলের ফোঁটায় পরিণত করা হয়, যা আর বাতাসে ভাসতে পারে না এবং মাটিতে পড়ে এবং বৃষ্টিপাত হয়। বিকল্পভাবে, রাসায়নিক রকেটগুলি ক্লাউড ক্লাস্টারগুলিতে নিক্ষেপ করা হয়।

আর এভাবেই ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে বর্ষণে ধরা পড়ে প্রাণের নবজীবন, আর তৃষ্ণার্ত মরুভূমির বুক সবুজ হয়ে ওঠে।

ক্লাইড সিডিং প্রযুক্তির ইতিহাস:

আমেরিকান রসায়নবিদ ভিনসেন্ট শেফারকে 'ক্লাউড সিডিং' এর জনক বলা হয়। শেফার 1946 সালের জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক পরীক্ষাগারে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রথম সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ করেন। পরে আরেকজন নোবেল বিজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী আরভিং ল্যাংমুর শেফারের সাথে যোগ দেন। একই বছরের 13 নভেম্বর, দুই বিজ্ঞানী বার্কশায়ার পাহাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশে মানব ইতিহাসে প্রথম ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তৈরি করতে সক্ষম হন। মজার বিষয় হল, শেফারের রসায়নে কোনো আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিল না। স্ব-শিক্ষিত বিজ্ঞানী, যিনি তার মৃত্যুর আগে 14টি পেটেন্ট রেখে গিয়েছিলেন,

© এমন নয় যে শেফারের আগে কেউ কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেনি। জার্মান-আমেরিকান প্রকৌশলী লুইস গটম্যান প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন যে 1891 সালে 'মেঘে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি হতে পারে'। পরবর্তীতে, 1930 এর দশকে, তিনজন ইউরোপীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েজেনার, টর বার্গনর এবং ওয়াল্টার ফাইন্ডেসেন কৃত্রিম তত্ত্বের প্রস্তাব করেন। ঠাণ্ডা মেঘে বরফের স্ফটিক বিক্ষিপ্ত করে বৃষ্টিপাত, যা শেফার-ল্যাংমুইর পরে জেনারেল ইলেকট্রিকের পরীক্ষাগারে বিমানের উপাদান নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখিয়েছিলেন।

ক্লাউড সিডিং এর সফল বাস্তবায়ন বনাম বিতর্ক:

ক্লাউড সিডিং কতটা কার্যকর, বা প্রযুক্তিটি আসলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়াতে পারে কিনা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে এইভাবে উত্পাদিত কৃত্রিম বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদে খুব একটা কাজে আসে না। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লাউড সিডিং পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। যাইহোক, ক্লাউড সিডিং স্বল্পমেয়াদী বা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কার্যকর প্রমাণিত।

© একটি উদাহরণ হল 2008 বেইজিং অলিম্পিক। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক শুরুর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস গেমসের উদ্বোধনী দিনে বেইজিংয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের আহ্বান জানিয়েছে। 100 মিলিয়ন ডলারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃষ্টির উপহাস কে সইবে! তারপর চীন এক অবিশ্বাস্য কাজ করল। গেমস শুরুর দিনগুলিতে সমুদ্র থেকে বেইজিংয়ের দিকে উড়ে আসা মেঘগুলিতে মোট 1,104টি রাসায়নিক-বোঝাই রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ফলাফল? বেইজিং আকাশে ঢোকার আগে বৃষ্টির সাথে মেঘ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি 8ই আগস্ট, 2008-তে বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়ামে একটি ঝকঝকে আকাশের নিচে বিনা বাধায় চলে যায়।

© চীনের কথা বললে, ধরা যাক যে চীন আজ বিশ্বের বেশিরভাগ কৃত্রিম বৃষ্টিপাত করে। এমনকি অনেক প্রতিবেশী দেশ তাদের দেশে বৃষ্টি না হওয়ার জন্য চীনকে দায়ী করছে। অনেক অভিযোগ রয়েছে যে চীন অত্যধিক মেঘের বীজ বপনের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস করছে, অন্যদিকে, চীন অন্যান্য দেশের আকাশে প্রবেশের আগেই শীতল মেঘগুলিকে হ্রাস করছে। চীনকে ইতিমধ্যেই 'বৃষ্টি চোর' উপাধি দিয়েছে ভারত!

ক্লাউড সিডিং টেকনোলজি যখন অস্ত্র দেওয়া হয়!

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1967 সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে একটি নজিরবিহীন উপায়ে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। 'অপারেশন পোপেই' নামে কুখ্যাত এই অভিযানে আমেরিকানরা হো চি মিনে প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে ক্লাউড সিডিং ব্যবহার করেছিল। ভিয়েতনামের উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে সংযোগকারী ট্রেইল। প্রধানত এর ফলে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে ভিয়েতনামী বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে খাদ্য ও অস্ত্র পরিবহন কঠিন হয়ে পড়ে।

© যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলি সচেতন যে যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মতো আবহাওয়া পরিবর্তন প্রযুক্তির ব্যবহার বেসামরিকদের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেক দেশের মধ্যে 1977 সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাউড সিডিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকে যেমন যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি মানুষের জীবন বাঁচাতেও এটি ঘন ঘন ব্যবহার করা হয়েছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে ৩ দিনে প্রায় ৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ইন্দোনেশিয়ার সরকার দ্রুত গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হল ক্লাউড সিডিং। জাকার্তা উপসাগরে তৈরি হওয়া মেঘগুলিকে শহরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইড স্প্রে করা হয়েছিল। শহরে ঢোকার আগে, সংলগ্ন নদীতে কিছুটা বৃষ্টি পড়লে, মেঘ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে।

ক্লাউড সিডিংয়ের একাধিক ব্যবহার:

বর্তমানে, অনেক দেশ তাদের বৃষ্টিনির্ভর ফসল উৎপাদনে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কৃষিতে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহারের দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে থাইল্যান্ড। থাই সরকার 1955 সাল থেকে একটি সরকারী কৃত্রিম বৃষ্টিপাত প্রকল্প পরিচালনা করছে, প্রধানত দেশের বৃষ্টি নির্ভর ফসল রক্ষা করার জন্য।

© সংযুক্ত আরব আমিরাত শুষ্ক এবং মরুভূমি অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কিভাবে একটি বর হতে পারে তার একটি সফল উদাহরণ। মরুভূমি এবং সমুদ্র দ্বারা ঘেরা এই নদীহীন দেশে প্রতি বছর গড়ে মাত্র 10 দিন বৃষ্টি হয়, যার মোট পরিমাণ মাত্র 120 মিলিমিটার। শুধু তাই নয়, দেশের ভূগর্ভস্থ পানির নব্বই শতাংশ লবণাক্ত। এই শতাব্দীর শুরু থেকে, সরকার বৃষ্টিপাত বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাত বাড়ানোর জন্য বড় আকারের গবেষণা, ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম হ্রদ ও বাঁধ নির্মাণ। এমিরেটস ন্যাশনাল মেটিওরোলজিক্যাল সেন্টারের একটি দল চব্বিশ ঘন্টা মেঘের উপর নজরদারি করে, এবং বৃষ্টি তৈরি করতে পারে এমন একটি মেঘ খুঁজে পেলে ক্লাউড সিডিং অপারেশন শুরু করে।

শুধুমাত্র 2017 সালে, তারা 242টি সফল ক্লাউড সিডিং অপারেশন সম্পন্ন করেছে যা 15-30 শতাংশ বৃষ্টিপাত বাড়াতে সাহায্য করেছে। এমিরেটস শুধুমাত্র কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেই নয়, সমুদ্রের নোনা জলের বিশুদ্ধকরণেও একটি রোল মডেল। দেশের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানির ৯৯ শতাংশই বিশুদ্ধ সমুদ্রের পানি।

© সবকিছুরই ভালো মন্দ দিক আছে। কোনটা নেবেন তা নির্ভর করবে মানুষের বুদ্ধিমত্তার ওপর। তাই প্রযুক্তির আরও উন্নতি ঘটিয়ে স্বল্প খরচে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তৈরি করা গেলে তা আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন সুধীজনরা।

Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...