Sunday, January 17, 2021

ব্রাসেলস স্প্রাউট বা মিনি বাঁধাকপির চাষাবাদ পদ্ধতি|

মিনি বাঁধাকপির বা ব্রাসেলস স্প্রাউট  চাষাবাদ পদ্ধতি

ব্রাসেলস স্প্রাউট  চাষাবাদ পদ্ধতি।

ব্রাসেলস স্প্রাউট গুলি দেখতে ছোট বাঁধাকপির মতো এবং অনেকে একে মিনি বাঁধাকপি বা ছোট বাঁধাকপি বলে থাকেন।

ব্রাসেলস স্প্রাউট পুষ্টির মান:-  বাঁধাকপির তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টির মান রয়েছে, প্রোটিন এবং ভিটামিন এ। বি কমপ্লেক্স (থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন) এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ক্যান্সার প্রতিরোধী গ্লুকোসিনোলেটস নামক জৈব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে।


চাষাবাদ পদ্ধতি:- ব্রাসেলস স্প্রাউট চাষের পদ্ধতি অনেকটা বাঁধাকপির মতো। বীজগুলিও বাঁধাকপির মতো দেখতে। চারা বীজ থেকে তৈরি হয়। এই চারাগুলি পরে প্রধান জমিতে রোপণ করা হয়।


জলবায়ু এবং আবহাওয়া:-শীতকালে ব্রাসেলস স্প্রাউট  ভালো জন্মাতে পারে। এ দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটি এবং পরিবেশ এই সবজি চাষের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। তাপমাত্রা ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে শীতকালে এটি সর্বাধিক ফলন দেয়। এই সবজিটি ০৮-২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে।


এটি শীতের ফসল। সুতরাং শীত যত দীর্ঘ হবে, এই ফসলের ফলন তত বেশি ভালো হবে । দেশের উত্তরাঞ্চলটি বেশ কার্যকর হতে পারে। তাই আগাম চাষে ফলন অনেক বেশি হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে মুকুলগুলির আকার ছোট হয় এবং কুঁড়ি তুলনামূলকভাবে কম হয়ে যায়।


জাত:- বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনও জাত বের হয়নি। তবে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ব্রাসেলস স্প্রাউট নিয়ে কাজ করার পরে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন। শিগগিরই নতুন জাতগুলি আমাদের কাছে আসবে।


তবে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পশ্চিমবঙ্গ,২৪ পরগনায় ব্রাসেলস স্প্রাউট রোপণ যথেষ্ট লক্ষণীয়। হিলস আইডল, অ্যামাজার, অলিভার, রিভাকো পার্ল ক্রিস্টাল, জেড ক্রস ইত্যাদি ব্রাসেলস স্প্রাউটগুলি সেখানে লাগানো হচ্ছে।


ফলের  রং:- সবুজ, গোলাপী, লাল, হালকা হলুদ ব্রাসেলস স্প্রাউট বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়।

বীজের হার: বীজ বপনের জন্য প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ গ্রাম বীজ লাগে।


চারা রোপণ :- বাঁধাকপি বীজ বপন যে সময় করে ঠিক সে সমায় কার্তিক-অগ্রহায়ণ (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর)। আগাম চাষের জন্য ২ মাসে আগে রোপণ করা যায়। ৩০-৩৫ দিনের পুরানো চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারিতে দূরত্বটি ৬0 সেমি বা ২ ফুট হবে, চারা থেকে চারা পর্যন্ত দূরত্ব ৪৫ সেমি বা ১.৫ ফুট হবে  বিকেলে চারা রোপণ করা ভাল।


জমি প্রস্তুতি:- ব্রাসেলস অন্যান্য  ফসলের চেয়ে দীর্ঘা দিনের হওয়ায় সারের মাত্রা কিছুটা বেশি দিতে হয়। ইউরিয়া সার ৩-৪  কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। আড়াআড়িভাবে ৩-৪ টা জমি চাষ করে, জমি নরম করে আগাছা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করতে হবে। মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে। মালচিং পেপার ছড়িয়ে দিয়ে আরও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।


সার প্রয়োগ: জমি তৈরির সময়, প্রতি হেক্টর জমিতে ৬ টন গোবর, ৯০ কেজি টিএসপি এবং ১২০কেজি এমপি মিশ্রিত করা উচিত। ইউরিয়া প্রতি হেক্টরে ১৫০ কেজি । ইউরিয়া তিনটি ভাগে প্রয়োগ করা উচিত, একটি অংশ রোপণের ৭ দিন পরে, 2 অংশ ২৫ দিনের পরে এবং ৩ অংশ ৪০ দিনের পরে প্রয়োগ করতে হবে।


যত্ন:- গাছটি বাড়ার সাথে সাথে দুটি সারিগুলির মাঝ থেকে মাটি সরিয়ে সারিগুলির সাথে একটি দ্বীপের মতো তৈরি করা হলে স্প্রাউট দূতো র্বৃদ্ধি পায়। সেচের পানি জমলে তা নিষ্কাশন করতে হবে। আপনি যদি দ্রুত ফলন পেতে চান তবে আপনাকে রোপণের দুই মাস পরে গাছের মাথাটি ভেঙে ফেলতে হবে। একে বলা হয় টপিং। 


রোগ এবং কীটপতঙ্গ:- ব্রাসেলস স্প্রাউটগ রোগ এবং কীটপতঙ্গগুলি বাঁধাকপির মতো। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ছত্রাকের দাগ এবং ব্লাইট রোগ গাছের পুরানো পাতায় প্রদর্শিত হয়।এক ধরণের বিটল বা লেদা পোকা দেখা যায় এবং বাহির থেকে ফল খেতে থাকে । এগুলি উপযুক্ত ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক স্প্রে করে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জীবনকাল: ফসলের জীবনকাল ৯০ থেকে১৫০দিনের মধ্যে  হয়। স্প্রাউট সাধারণত দুই মাস পরে গাছে ধরতে শুরু হয়।

ফসল সংগ্রহের সময়:- স্প্রাউটগুলি আগমনের ১৫-২০ দিন পরে সংগ্রহ করা যায়। স্প্রাউট সপ্তাহে ২বার গাছ থেকে তোলা যায়।

ফলন: একটি গাছে ৪৫-৬০ টি স্প্রাউট হয় । গাছে যত বেশি পাতা থাকবে, ততই স্প্রাউট ধরবে। স্প্রাউটগুলির আকারের  ৮-১০  সেমি এবং ৫0-৬0 গ্রাম ওজনের হতে পারে।

ছাদে ব্রাসেলস স্প্রাউট লাগানো যেতে পারে:-

ব্রাসেলস স্প্রাউট একটি শীতের সবজি যা ছাদ বাগানের জন্য রোপন করা যায়। গাছটি সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় এবং রোপণের ৩৫-৬০ দিনের মধ্যে গাছের চারদিকে  (কুঁড়ি) দেখা দেয়। স্প্রাউটগুলি কুঁড়ি উত্থানের ২৮  দিনের মধ্যে ফসল কাটার জন্য উপযুক্ত হয়।


দেশজুড়ে এই সম্ভাব্য নতুন সবজি চাষ সম্প্রসারণের সাথে সাথে আশা করা যায় যে দেশের পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে এবং সবজি চাষ লাভজনক হবে।


সৌজন্যে---------------------


No comments:

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box.

Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...