Wednesday, April 28, 2021

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতিবন্ধকত

 পোস্টটি মাছ চাষের নতুন উদ্যোক্তা এবং মাছ চাষী ভাইদের কাজে লাগবে কেননা তারা প্রতিবন্ধকতাগুলো র বিকল্পটা তৈরির পাশাপাশি সতর্ক থেকে অভিজ্ঞদের হেল্প নিয়ে দেশের অন্যতম মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতাঃ



বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতাঃ  


১.সবল ও কোয়ালিটি সম্পন্ন পোনা না  চেনা বা না কেনাঃ

সস্তা জিনিসের বেশি আমাদের ঝোঁক হওয়ায় আমরা পোনা সবল ও কোয়ালিটি সম্পন্ন কিনা তা বিবেচনা না করা এবং অনেক সময় অনলাইন থেকে তাদের রোমাঞ্চকর বিজ্ঞাপনে আমরা পোনা কিনে থাকি। অনেকসময় পোনা কিনতে গিয়ে দামে ঠকছি, পরিমাণে ঠকছি এবং গুণেও ঠকছি। অনভিজ্ঞ ও নতুন চাষীরা এরকম  প্রতারণার সম্মুখীন বেশী হচ্ছে। 

২. পানির মান পরীক্ষা না করাঃ

পানিতে iron, arsenic, Salinity বা হেভী মেটাল কি পরিমাণ আছে বা আছে কিনা সেটা না জেনে আমরা চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি। আবার ওয়াটার প্রিপারেশন আমরা ভুল ভাবে করে থাকি।


৩।নিম্ন কোয়ালিটি সম্পন্ন খাবার ও খাবারে দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধিঃ

অনেক কোম্পানির ফিডের বস্তায় protein লেখা থাকে ৩০ কিন্তু বাস্তবে lab এ পাওয়া যায় 18-20.

আর আমরা অনেকে খাবার সংরক্ষণ সঠিকভাবে না করায় খাবারের গুনাগুণ ক্ষুন্ন হচ্ছে

আর বায়োফ্লকে যেই উৎপাদন খরচ তার সাথে বাজারমূল্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিলানো যায় না।

৪।পানির parameters ও পানির গুনাবলী সম্পর্কে ধারণা না থাকাঃ

Waterb temperature, P^h, Dissolved O^2,Alkalinity, Hardness, TDS,NH3, Iron,dept,Salinity সম্পর্কে ধারণা না থাকা

বিশেষত, ইসরাইলের বিজ্ঞানী Professor yoram avnimelech তার ওখানে tds রেখেছে 14000-18000 mg/L. কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য tds কত উপযুক্ত সেটা বিবেচনা না করা। তারপর শিং মাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের tds, salinity কত থাকা উচিত বা কত এর বেশি হলে সহ্য করতে পারে না বা গ্রোথ স্লো হয়ে যায় সেটা সম্পর্কে ধারণা না রাখা

এছাড়া প্লোবায়োটিক সম্পর্কেও তাদের ভালো ধারণা না থাকায় বা অসাধুদের অনেকে প্লোবায়োটিক তৈরিতে  বালু /sand  মিশিয়ে ক্রোয়ালিটি কমিয়ে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া কম দিয়ে প্রতারণা করছে

৫।আড়তদার ও মধ্যস্থতা ভোগীদের (সিন্ডিকেট) এর দৌরাত্ন্য ঃ

চাষীদের দাম কম পাওয়ার পিছনে এরাও একটা অন্যতম কারণ।কেননা এরা চাষীদের কাছ থাকে সব মাছ পাইকারি দামে ক্র‍য় করে বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে উচ্চ দামে মাছ বিক্রি করে করে থাকে। তাছাড়া আড়তদার এর কাছে মাছ বিক্রি করলে এরা মণে  ৪-৫ কেজি মাছ বেশী রাখে চাষীদের কাছ থেকে।

ফলে চাষীরা ঠকছে, ভোক্তা ও ঠকছে

কিন্তু ৩ য় পক্ষ লাভবান হচ্ছে

৬. মাছের বাজারমূল্য বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কম থাকাঃ

মাছের দেশে মাছ আমদানি করায়  এবং কোভিড পরিস্থিতিতে রপ্তানি বন্ধ থাকায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে 

উল্লেখ্য, আমদানিকৃত মাছের মধ্যে অনেক মাছে কয়েক বছর আগেও সীসা,লেড, ক্রোমিয়াম ও পারদ পাওয়া যেত যা স্বাস্থের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর (জানি না বর্তমানে কেমন পাওয়া যাচ্ছে নাকি ) । আর বিক্রেতারা দেশী মাছের চাহিদা বেশী থাকায় বিদেশি আমদানি মাছকে দেশী বলে বিক্রি করছে।


৭.সঠিক রোগের ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে ধারণা না থাকাঃ অনেক চাষি অনলাইন বা অফলাইন থেকে রোগের ট্রিটমেন্ট কারেক্ট করে তারা যে যেভাবে ট্রিটমেন্ট বলছে সেভাবে দিচ্ছে।

৮. মৎস্য ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের অভাবঃ এ খাতে আমরা হাতে কলমে কাজ করা টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন  ফিসারিজ ডিপ্লোমা পড়ুয়াদের তেমন কাজে লাগাতে পারছি না বা সুযোগ দিচ্ছি না - যারা কিনা ৪ বছর ফিসারিজ ডিপ্লোমা (৫২ সাবজেক্ট) পড়ে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে আসে।  ফলে পরোক্ষভাবে ফিসারিজ সেক্টর তার সুযোগ হারানোর পাশাপাশি চাষীরা ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 


৯.প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা না থাকা বা কম থাকা


১০. অসাধু পোনা ও পোডাক্ট ব্যবসায়ীঃ

ওদের রোমাঞ্চকর বিজ্ঞাপন, ওভার কনফিডেন্স  বা নতুন উদ্যোক্তা ও চাষীদের অতি উৎসাহ দিয়ে তাদের বিভিন্ন পোনা, পোডাক্ট, parameter, ফিড,মেশিনারি  প্রভৃতি বিক্রি করে থাকে যেগুলো ভাল ও গুণাগুনসম্পন্ন পণ্য নয়।


১১. ট্রেইনারদের প্রতি নেতিবাচকতাঃ

কিছু অসাধু ট্রেইনার যারা ট্রেইনারের নামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের কারণে প্রকৃত ট্রেইনারদের আমরা খুজে নিতে ব্যর্থ হচ্ছি।

তবে আমার কাছে মনে হয়, ভালো ট্রেইনাদের খুজে তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া উচিত কেননা আমরা লাখ লাখ টাকার মাছ চাষ করবো কিন্তু ৩-৪ হাজার টাকার কারণে প্রশিক্ষণ নিবো না  সেটা হয় না। কেননা,উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে চাষীরা অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতাগুলো মাথায় রেখে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাইদের ও স্যারদের হেল্প নিয়ে আমরা যাতে চাষের প্রসার ঘটিয়ে মাছের উৎপাদন বাড়াতে পারি - সেদিকে দৃষ্টিপাত রেখে আমাদেরকে এ সেক্টর কে আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ সফলতা আসবে।


মাহতাবুজ জামান রাফছান 

ফিসারিজ ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট, ৬ষ্ঠ ব্যাচ

আই. আই. এ. এস. টি,  রংপুর (ফিসারিজ ডিপার্টমেন্ট- অধ্যয়নরত)

No comments:

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box.

Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...