Wednesday, June 16, 2021

আমি কৃষক সংগ্রাম আমার জীবন

 

সংগ্রামী জীবন।

আমি খুলনা জেলার সাজু,বয়স ছাব্বিশ চলে।এক বছর ধইরে মা পাগল হইছে ঘরে বউ আনতি হবে,এ্যাদ্দিন মারে বুঝোউয়ে শুনোয়য়ে রাখিছি মাথা গুজার একটা ঠাঁই কইরে যা ভাবার ভাইবো...

আইজকে বুধবার পশ্চিম বাড়ির সালাম কাক্কুরে নিয়ে বাজারে আইছি নতুন ঘরের টিন কিনতি। টিনের দিকি তাকালি চোখ দুডো ঝাপসা হইয়ে বুক ফাইট্টে কান্না আসে। আইজ কে যদি বাবা বাঁইচে থাকতো...।
বাবা যেদিন দুপুরে হাওলাদার গে বাগানে আমগাছে ফাঁস দিছিল আমার বয়স তখন নয় বছর,মনে আছে নীচের পাটির দুডো দাঁত পড়িছে,উপরের একটা নড়ে।ছোট ভাই রাজু তিন বছরের বাচ্চা,সারাদিন ক্ষিদের চোটে মার পিছে ঘ্যান ঘ্যান করে। মা থালার মদ্যি কয়ডা মুড়ি ছিডায়ে ওরে বারান্দায় বসায়ে নিজে মেয়ের শোকে কাঁদতি বসে।এমন সময় বাহিরে শোরগোল শুইনে আমি দৌঁড় দিই,দ্যাহি লোকজন রশি কাইটে বাবার শইলডা নামাচ্ছে! আমি একটা চিৎকার দিয়ে পইড়ে গেছি,তারপর আর কিছু মনে নেই
যহন হুঁশ ফিরিছে দেহি বুনির কবরের পাশ দিয়ে বাবার কবর খুঁড়তিছে লোকে।

আমাগে দুই ভাইয়ের মাঝখানে সুন্দর ফুটফুইটে একডা বুন ছিল, বুনির গাল দুডো ছিলো ক্যামুন ফুলাফুলা,আমি মায়া কইরে ওর গাল টাইনে দিতাম,অরে নিয়ে বিলি শাপলা আনতাম। বুনডার আমার কি যে হলো মাস ধইরে ক্যাবল জ্বরে ভুগে।বাবা ঔষধের দুকানে দুডো বড়ি আইনে খাওয়ালি জ্বর কমে,পরদিন আবার বাড়ে।

মা' তাবিজ কবচ, পানিপড়া আনে, লতা পাতা চেঁইচে খাওয়ায়,গরীবের যেমন চিকিৎসা...। দিন কয় পর অর হাতে পায়ে পানি নাইমে ফুইলে ওঠে,পেটে অসইয্য ব্যাথায় ছটফট করে,বুনির কষ্ট সইহ্য করতি না পাইরে বাবা সুদের উপর টাহা নিয়ে বড় ডাক্তার দ্যাহায়,কিন্তু ততদিন সময় ফুরায়ে গ্যাছে...।বুনডারে কবরে শোয়ায়ে শোকে দুঃখে বাবা একেবারে চুপ মাইরে গেলো,মায় বুনির ছিঁড়া ফ্রকডা বুকি জড়াইয়ে বিলাপ কইরে কান্দে।
পেটের খিদের কাছে শোক বেশীদিন টিকতি পারেনা,বাবা আবার পরের ভুঁইতি কামলা দিতি যায়,মা যায় কাজী বাড়ির ধান ভানতি...।

সেইদিন হলো শনিবার, সইন্ধায় বাবা বাজারে গেলি পাওনাদার আইসে সামনে খাড়ায়,তিনমাস হয়ে গেছে বাবা কোন সুদ দিতি পারিনি। হুমকী ধমকির মুখি বাবা হাতজোড় কইরে আর কয়দিন সময় চালি মহাজনের শক্ত হাতের চড় পড়ে বাবার গালে, তাতে ও মহাজনের ঝাল কমেনা,শাসিয়ে দেয় - সামনের হপ্তায় টাহা দিতি না পারলি ২শতকের বসত ভিইটে লেইখে দিতি হবে। শোকে,দুঃখি,অপমানে বাবা পরদিন দুপুরি আমগাছে.......
তারপর... বাবাহীণ সংসারে খেয়ে না খেয়ে মা আর ছোট ভাইডারে সঙ্গী কইরে চলে বাঁচার লড়াই। সেই নিদারুন কষ্টের কথা কওয়ার ভাষা আমার জানা নাই,তয় একডা কথা বুইঝিছি-সৎ পথে থাইকে লড়াই করলি আল্লাহ ও মুখ তুইলে চায়। পাঁচ বছর আগে মায়ের পরামর্শে সাহস কইরে অন্যের জমিন পত্তন নিইয়ে শুরু করিছি পেয়ারা চাষ....। বছর ঘুইরে কিছু লাভের মুখ দ্যাকলাম।সাহস গেলো বাইড়ে, বাড়ায় দিলাম চাষের পরিমান। এখন লোকে আমারে চিনে একজন সফল চাষী হিসেবে,আনন্দে গর্বে বুকটা আমার ফুইলে ওঠে।

হাজার আনন্দের বড় কষ্ট -- এই সুখ দেখার জন্যি বাবাটা বাঁইচে নাই। একডা লাল জামা,চুড়ি, ফিতের জন্যি বায়না ধরার বইনডে নাই.....
আমি কৃষক সংগ্রাম আমার জীবন।
ভাল থাকবেন আপনারা কথা হবে আবার সবুজে সবুজে।

No comments:

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box.

Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...