Saturday, January 29, 2022

পেরিলা চাষ



পেরিলা চাষ।


 পেরিলা চাষ। 


তেল বীজ জাতীয় সবজি পেরিলা। বাংলাদেশে এই প্রথম স্বীকৃতি পেল নতুন ভোজ্য তেল ফসল পেরিলা। পেরিলার বৈজ্ঞানিক নাম Perilla Frutescence। পেরিলার আদি নিবাস চীন দেশে হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর বিস্তৃতির কারণে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। পেরিলা বীজে তেলের পরিমাণ ৪০/৪২ শতাংশ। এই তেলে ৫০-৬৫ ভাগ ওমেগা, ও ৩ ফেটিএসিড ও ৯১ শতাংশ অসম্পৃক্ত ফেটিএসিড থাকে। সেই কারণে এই তেল মনব শরীরের জন্য বেশ উপকারী। পেরিলার পাতা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

 

পেরিলা চাষ করে আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইস.এম.এম. তারিখ হোসাইন ২০০৭ সালে কোরিয়া থেকে পেরিলার বীজ সংগ্রহ করে, গবেষণা শুরু করেন। তিনি এই ফসলে বাংলাদেশে চাষ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেন। প্রফেসর তারিখ হোসাইনের তত্ত্বাবধানে তার পিএসডি ফেলু, আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার পেরিলা নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা করছেন। তার গবেষনায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জাতীয় বীজ বোর্ড, পেরিলার একটি জাত চাষ করার জন্য ২০২০ সালে অবমুক্ত করেন।
 

 

 

পেরিলা: দেশের কৃষকরা এখনো এই ফসলের সাথে খুব একটা পরিচিত নন। অথচ বিশ্বের উকৃষ্ট ভোজ্য তেল উপাদিত হয়, পেরিলার বীজ থেকে। এই দেশে এই বীজ উপাদন নিয়ে গত বছর ধরে চলছে গবেষণা। এই ধারাবাহিকতায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাসহ দেশে ১০টি কৃষি অঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ হয়েছে। এর ফলে ফলনও ভাল দেখা যাচ্ছে। জুলাই থেকে অক্টোবর মৌসুমে অনেক উচু জমি খালি পড়ে থাকে এই সময়টা জানা যায় যে, পেরিলা চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। ফলে দেশে তেল বীজ উপাদনের পাশাপাশি, আর্থিকভাবে কৃষকরা লাভবান হবেন এই পেরিলা চাষে। গবেষনায় বলছেন, বাংলাদেশের আবহাও হেক্টর প্রতি দেড় টন বেশি উচ্চ, গুনগত পেরিলার মানসম্পন্ন পেরিলার উপাদন পাওয়া গেছে। এতে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা ৩ রয়েছে, যা হৃদরোগ, ত্বকসহ ডায়বেটিসের উচ্চ মাত্রায় ঔষধ। কৃষি অধিদপ্তর পেরিলাকে দেশের নতুন ফসল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে।

 

 

পেরিলা চাষ।

 

পেরিলা তেলের উপকারী দিকগুলো :

 
১। এটি স্টোমাচে ব্যাথা প্রশ্বাস, হাঁপানি, কাশি এবং মাংসপেশীর কোষ দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
২। এটি অকাল ত্বকের মেরামত করে।
৩। এটি মাথার ত্বক এবং চুলকে সুরক্ষিত পুষ্টি জোগায়।
৪। এটি চুলকানি এবং ত্বকের ফোলা ভাব থেকে মুক্তি দেয়।
৫। এটি মেমরি সমস্যা এবং কোলন ক্যান্সারের মত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করে।
৬। এটি বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দের স্মৃতিশক্তি এবং শেখার উন্নতি করে।
৭। এটি এ্যাকজিমা এবং ব্রণের মতো ত্বকের অবস্থা রোধ করে।
৮। এটি ত্বককে শান্ত, পরিষ্কার ও সতেজ রাখে।
৯। এটি আটকে থাকা এবং তৈলাক্ত ত্বকের সম্ভাবনা কমায়।


 


পেরিলার বীজ তলা, বীজ বপন ও জমি তৈরি: জুলাই থেকে অক্টোবর মৌসুমে এই পেরিলার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পেরিলা অত্যন্ত ফটোসেনটিভ ফসল। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম ৭ দিনের মধ্যে পেরিলা গাছে ফুল আসতে থাকে। কাজেই গাছ বড় হওয়া, ও নির্ধারিত মাত্রায় ফলন পেতে হলে নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই বীজ বপন করতে হবে। প্রতি হেক্টরে এক থেকে দেড় কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজতলার প্রস্থ্য হবে এক থেকে দেড় মিটার। বীজতলায় জৈব সার ব্যবহার করে অনেক ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে। বীজতলার মাটি অবশ্যই ঝুরঝরে রাখতে হবে। বীজতলায় নালার ব্যবস্থা রাখতে হবে যাহাতে পানি না জমে থাকে।


 

১-৪ ইঞ্চি গভির করে বীজ বপন করতে হবে। অথবা বীজ ছিটিয়ে দিয়ে ঝুরঝুরে মাটি উপরে দিয়ে দিতে হবে, যাতে বীজতলা যেন একেবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জমির চারপাশের নালার ব্যবস্থা রাখলে পানি দেওয়ার জন্য সুবিধা হবে। প্রত্যেকটা গাছ থেকে গাছের দুরুত্ব ৩০-৪০ সে:মি: রাখতে হবে এবং লাইনের দুরুত্ব ৩০-৪০ সে:মি: দূরে করে চারা রোপন করতে হবে। আর এভাবে পেরিলার চাষ করতে হবে।


পরিশেষে বলা যায় যে, পেরিলার মতো বেশি উপাদনশীল ও সমৃদ্ধ নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করা গেলে উন্নত জীবন-যাপনের পথ হবে সুগম।


ধন্যবাদান্তে

রবিউল ইসলাম

কৃষি পরামর্শ Group




ল্যামিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত পেরিলা একটি তেলবীজ ফসল। তৃণজাতীয় এই উদ্ভিদ পেরিলা ফ্রুটেসেন্স বা কোরিয়ান পেরিলা নামেও পরিচিত। পেরিলা মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বেশি ব্যবহৃত হয়। পেরিলা তার সুগন্ধের জন্য এবং বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীতে, বিশেষ করে জাপানি কিংবা কোরিয়ান খাদ্যসামগ্রীতে স্বাদবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ভারতের বেশ কিছু উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যেও মশলা হিসেবে জনপ্রিয়।


পেরিলা বীজের উপকার:

পেরিলা বীজ প্রচুর পুষ্টির সাথে ঘন বাদামি স্বাদযুক্ত একটি খাবার। এই বীজে ওমেগা-৩-৬-৯ এর মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। এটি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ও খনিজ পদার্থ, যেমন- ফসফরাস, তামা, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, এবং কোএনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। পেরিলা বীজে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর চর্বি প্রায় ৬০%, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, আলফা-লিনোলেনিক এসিড (ALA) এর মাত্রা ৫৪-৬৪%। এই অপরিহার্য ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করে। এছাড়াও পেরিলায় থাকা ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা-৩ এর সংমিশ্রণে কাজ করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং মানুষের ত্বকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পেরিলা বীজে উপস্থিত ওমেগা-৯ (ওলিক অ্যাসিড) হৃদরোগ এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।



প্রতি ১৫০ গ্রাম (১ কাপ) পেরিলা বীজে ৮১৬ ক্যালোরি শক্তি থাকে। যার মধ্যে—
প্রোটিনের পরিমাণ = ৫৫ গ্রাম (১০৬.২ ক্যালরি)
ফ্যাটের পরিমাণ = ১ গ্রাম (৫৮৫.৯ ক্যালোরি)
কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ = ৪৪.১ গ্রাম (১৭৬.৪ ক্যালোরি)
এছাড়াও পেরিলাতে ভিটামিন, খনিজ এবং ডায়াটরি ফাইবার থাকে।




পেরিলা পাতার উপকারিতা:
পেরিলাগুল্মের রয়েছে আরও অনেক ব্যবহার। ক্ষেত্রবিশেষে এটি বিফস্টেক নামেও পরিচিত। রান্নাঘরে পেরিলা পাতাগুলো তাদের প্রাণবন্ত বেগুনি রঙের কারণে খাবার সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। পেরিলার রয়েছে কিছু ঔষধি গুণ। এটি হাঁপানি, বমি বমি ভাব এবং সানস্ট্রোকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি ঘাম প্ররোচিত করতে এবং পেশীর খিঁচুনি কমাতেও ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ুর সাথে এই ফসলের সফল অভিযোজন ঘটাতে পেরেছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।





ফসলের পরিচর্যা

 মাঘ মাসের কৃষি।


মাঘ মাসের কনকনে শীতের হাওয়ার সাথে কিছু উষ্ণতার পরশ নিয়ে আবার আপনাদের মাঝে হাজির হচ্ছি আগামী মাসের কৃষি নিয়ে। মাঘের শীতে বাঘ পালালেও মাঠ ছেড়ে আমাদের পালানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা এ সময়টা কৃষির এক ব্যস্ততম সময়। আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নেই মাঘ মাসে কৃষিতে আমাদের করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো-

 

ফসল / অবস্থা/বিবরণ /করণীয়  

 

বোরো ধান

পরিচর্যা    

মাঠে বোরো ধানের বাড়ন্ত পর্যায় এখন। এ সময় বোরো ধানে প্রয়োজন সারের উপরি প্রয়োগ, নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখন। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে পারেন। এতে একরে ৬৫ কেজি গুটি ইউরিয়ার প্রয়োজন হয়।

 

বালাই ব্যবস্থাপনা

এ সময় ধান ক্ষেতে রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। রোগ ও পোকা থেকে ধান গাছকে বাঁচাতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আন্তঃপরিচর্যা, যান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন। এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

গম

আন্তঃপরিচর্যা ও সেচ প্রদান

গমের জমিতে যেখানে ঘন চারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে। এ সময় গমের শিষ বেড় হয়।  যদি শিষ বেড় হয় বা গম গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখতে হবে ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দেয়া বেশি জরুরি। এ সময় গম ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব হয়ে থাকে তাই ইঁদুর দমন জরুরি। তবে ইঁদুর দমনের কাজটি করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

 

ভুট্টা    

আন্তঃপরিচর্যা ও সেচ প্রদান    

ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর সেচ প্রদান করতে হবে এবং গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিতে হবে। ভুট্টার সাথে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে।

 

আলু    

বালাই ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা    

আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। তবে বালাইনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা দরকার। এছাড়া বালাইনাশক কেনার আগে  তা ভালোমানের কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে।  আলু  গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির  সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

তুলা    

সংগ্রহ    

এ সময় তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ভালো তুলার সাথে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনও না মেশে।

 

ডাল ও তেল ফসল    

সংগ্রহ    

মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এত জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।

 

শাকসবজি    

পরিচর্যা    

শীতকাল শাকসবজির মৌসুম। নিয়মিত পরিচর্যা করলে শাকসবজির ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া , মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথকে ধরে সহজে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া ক্ষেতে পতঙ্গভুক পাখি বসার  ব্যবস্থা করতে হবে। আধাভাঙ্গা নিম বীজের নির্যাস (৫০ গ্রাম এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১২ ঘণ্টা ভেজাতে হবে এবং পরবর্তীতে মিশ্রনটি ভালো করে ছাকতে হবে) ১০ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবীকইন ২৫ ইসি/কিনালাক্স ২৫ ইসি/করোলাক্স ২৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। এ সময় চাষিভাইরা টমেটো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ৪-৫ মাস পর্যন্ত অনায়াসে টমেটো খেতে পারবেন। আর শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক সেচ দিতে হবে। তাছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি।

 

গাছপালা    

পরিচর্যা    

শীতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে, গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত এ সময় আম গাছে মুকুল আসে। গাছে মুকুল আসার পরপরই এ মুকুল বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আমের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ।  এ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে টিল্ট-২৫০ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে। এ সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

প্রাণিসম্পদ    

হাঁস-মুরগির যত্ন  

শীতকালে পোলট্রি তে যেসব সমস্যা দেখা যায় তা হলো-অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা। মোরগ-মুরগির অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে। তবে সেটি অবশ্যই প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।  

 

শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পোলট্রি লিটারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রোধে ১ বর্গফুট জায়গায় ১ কেজি হারে অ্যামোনিল পাউডার মিশাতে হবে। শীতকালে মোরগ-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সপ্তাহে দুই দিন খাবারের সাথে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি মিশিয়ে দিতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে অনেকেই হাঁস পালন করে থাকেন। এ সময় হাঁসের নানা রোগও হয়ে থাকে।  হাঁসের যেসব রোগ হয় সেগুলো হলো- হাঁসের প্লেগ রোগ, কলেরা রোগ এবং বটুলিজম। প্লেগ রোগ প্রতিরোধে ১৮-২১ দিন বয়সে প্রথম মাত্রা এবং প্রথম টিকা দেয়ার পর ৩৬-৪৩ দিন বয়সে দ্বিতীয় মাত্রা পরবর্তী ৪-৫ মাস পরপর একবার ডাক প্লেগ টিকা দিতে হবে।  হাঁসের কলেরা রোগের জন্য ডাক কলেরা টিকা ৪৫-৬০ দিন বয়সে ১ বার, ৬০-৭৫ দিন পর দ্বিতীয় বার এবং পরবর্তী ৪-৫ মাস পর পর টিকা দিতে হবে।

 

গরু-বাছুরের যত্ন  

গোখামারে শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।  নাহলে গাভীগুলো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যাবে। এ সময় গাভীর খাবার প্রদানে যেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে তাহলো- সঠিক সময়ে খাদ্য প্রদান, গোসল করানো, থাকার স্থান পরিষ্কার করা, খাদ্য সরবরাহের আগে খাদ্য পাত্র পরিষ্কার করা এবং নিয়মিত প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। তবে গাভীর খাবারের খরচ কমাতে সবচে ভালো হয় নিজেদের জমিতে তা চাষাবাদ করা। আর একটি কাজ করলে ভালো হয় সেটি হলো-সমবায় সমিতি করে ওষুধ ও চিকিৎসা করানো। এতে লাভ হয় বেশি। খরচ যায় কমে।  

 

মৎস্যসম্পদ    

মাছের যত্ন  

শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে যায়। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও বেড়ে যায়। সে কারণে কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ বেশি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় এ বিষয়ে আপনার কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করা।

 

সুপ্রিয় পাঠক, অত্যন্ত সংক্ষেপে মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজগুলোর উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো। আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের গ্রহণযোগ্যতার সমন্বয়ে কৃষিকে নিয়ে যেতে পারেন এক আলোকিত ভুবনে। কৃষির যে কোন সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আর আপনাদের মেধা, ঘাম, সচেতনতা এবং আন্তরিকতাই এ দেশের কৃষিকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শীর্ষে। সোনালি মাঠ, প্রান্তর, দিগন্ত কৃষির উজ্জ্বল আভায় উদ্ভাসিত হবে। কথা হবে আগামী সংখ্যায়। সবার জন্য শুভ কামনা।

 

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন

সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা।

Thursday, January 27, 2022

কাগজি লেবু

কাগজি লেবু।

কাগজীলেবু।




 কাগজী একটি জনপ্রিয় লেবু জাতীয় ফল। এটি ( Rutaceae) পরিবারভুক্ত একটিচিরহরিৎ দ্রsতবর্ধনশীল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। 


স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান এবং ঔষধি গুণাগুণের ভিত্তিতে লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে কাগজি লেবু।

অন্যতম। কাগজী লেবু প্রধানত ভিটামি সি, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ। গরমের দিনে তৃঞ্চা নিবারণের ক্ষেত্রে কাগজী লেবুর ’সরবত’ অদ্বিতীয় পানীয়। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় এর কাগজী লেবুর চাষ হলেও পাহাড়ী


এলাকাসহ রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চট্টগ্রাম জেলায় এই লেবু বেশি পরিমাণে উৎপনড়ব হয়। দেশে কাগজী লেবুরঅত্যাধিক চাহিদা এবং এই লেবু সারা বছরব্যাপী উৎপাদিত হয় বিধায় কাগজি লেবু।

 এদেশে একটি সম্ভাবনাময় ফসলহিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।


বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগৃহীত জার্মপ্লাজমের মধ্য থেকে বাছাই করে মূল্যায়েনের মাধ্যমে বারি কাগজীলেবু-১'


জাতটি উদ্ভাবন করা এবং ২০১৮ সালে জাত হিসাবে অনুমোদন করা হয়।নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছ ঝোপালো স্বভাবের, পাতা ছোট, উপবৃত্তাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচালো ও গাঢ় সবুজ বর্ণের। ফুল সাদা, ছোট, উভয়লিঙ্গিক, পাঁচ (৫) পাপড়ি বিশিষ্ট্য। ফল আকারে বড় (প্রতি ফলের গড় ওজন ৮২ গ্রাম), উপবৃত্তাকার। 



ফল দেখতে উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের, সাধারণত গুচ্ছাকারে ধরে। ফল ফলের অভ্যন্তরে ১১-১২ টি খÐ বিদ্যমান, খাদ্যোপযোগী অংশ প্রায় ৫৭% এবং টিএসএস ৭.৩৫%। ভিটামিন সি : ৬৫ মিলি. গ্রাম/১০০ গ্রাম । ফলে ১৫-২২ টি পর্যন্ত বীজ বিদ্যমান। কাগজী লেবুর জাতটিতে প্রধান প্রধান রোগ ও পোকা-মাকড় এর আμমণ অত্যন্ত কম। সাইট্রাসজাতীয় ফলের অন্যতম প্রধান রোগ ক্যাংকার ও গামোসিস রোগ সহিষ্ণু ।

জলবায়ু ও মাটি: কাগজী লেবু উষ্ণ ও অবগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফসল। সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে কাগজী লেবুভাল জন্মে। গভীর দোআঁশ মাটি কাগজি লেবু।

 চাষের জন্য সর্বোত্তম। তবে কাগজী লেবু গাছ রোদ্রজ্জ্বল পরিবেশে ওসুনিষ্কাশ সম্পনড়ব মধ্যম অ¤য় মাটিতে ভাল হয়। এটি পাহাড়ী এলাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য। অতিরিক্ত আর্দ্রপরিবেশ কাগজী লেবুর জন্য ক্ষতিকর। সাধারণভাবে ২৫০ থেকে ৩০০ সে. তাপমাত্রায় এটির দৈহিক বৃদ্ধি সবচেয়ে ভাল হয়, ১৩০ সে., এর নিচে এবং ৪০০ সে. এর উপরে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়।



জমি নির্বাচন ও তৈরি: রোদযুক্ত সুনিষ্কাশিত উঁচু জমি অথবা পুকুর, রাস্তা বা পাহাড়ের ঢাল লেবু চাষের জন্য উত্তম।


বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ভাল ভাবে পরিস্কার করে জমি তৈরি করতে হয়।পাহাড়ী ঢালু জমিতে ঢালের অবস্থান বুঝে আগাছা পরিস্কার করার পর নির্দিষ্ট দুরত্বে গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগকরতে হবে। এখানে সমতল ভূমির মতো জমি চাষ দেয়ার প্রয়োজন নেই। চারা রোপণ করার ১৫-২০ দিন পূর্বে ৩ মিটার  ৩ মিটার দূরত্বে ৮০ সে.মি. দ্ধ ৮০ সে.মি. দ্ধ ৮০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি গোবর অথবা জৈব সার, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৩০ গ্রাম বোরণ সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে। তবে মাটি অধিক হলে হেক্টর প্রতি ১ টন অথবা

গর্ত প্রতি ১.৫ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত রোপণ দূরত্ব হিসাবে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১১০০ টি চারা দরকার। রোপণ পদ্ধতি ও রোপণ সময়: কাগজী লেবুর চারা সারি করে বা বর্গাকার প্রণালীতে লাগালে বাগানে আন্তঃপরিচর্যা ও ফলসংগ্রহ সহজ হয়। পাহাড়ী ঢালু জমিতে ঢালের আড়াআড়ি সারি করে চারা লাগালে মাটি ক্ষয় কম হয়। জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উত্তম সময় তবে সেচ সুবিধা থাকেলে সারা বছর চারা লাগানো যায়।



চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা: মাদা তৈরি করার ১৫-২০ দিন পর চারা বা কলম লাগাতে হয়। চারা গর্তের ঠিক মাঝখানেখাড়াভাবে লাগাতে হবে এবং চারার চারদিকের মাটি হাত দিয়ে চেপে ভালভাবে বসিয়ে দিতে হয়। তারপর চারাটি খুঁটিরসাথে বেঁধে দিতে হবে।


আগাছা দমন: গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য সবসময় জমি পরিষ্কার বা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ১ মিটার পর্যন্ত জায়গা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

পানি ও সেচ নিষ্কাশন: চারা রোপণের পর ঝরণা দ্বারা বেশ কিছু দিন পর্যন্ত পানি সেচ দিতে হবে। সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে কাগজি লেবু।

বাগানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য বৃষ্টি ও সেচের অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।


ডাল ছাঁটাইকরণ: গাছের গোড়ার দিকে জল-শোষক শাখা বের হলেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের ভিতরের দিকেযে সব ডালাপালা সুর্যালোক পায়না সেসব দুর্বল ও রোগাμান্ত শাখা প্রশাখা নিয়মিত ছাটাই করে দিতে হবে।সেপ্টে¤¦র-অক্টোবর মাস ছাঁটাই করার উপযুক্ত সময়। ছাঁটাই করার পর কর্তিত স্থানে বর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে ছত্রাক আμমণ করতে না পারে।

পাতার সুড়ঙ্গ পোকা (সাইট্রাস লিফমাইনার)

এ পোকার ক্ষুদ্র কীড়া পাতার উপত্বকের ঠিক নিচে আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাতায় ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং পাতার

সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এতে করে পাতা কুঁকড়ে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকা

ক্যাংকার রোগ ছড়ায়।

দমন ব্যবস্থা: গাছে নতুন পাতা গজানোর সময় অথবা যখনই এ পোকার আμমণ দেখা যাবে তখন ইমিটাফ ২০ এসএল

প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।

সাইলিড বাগ: সাইলিড বাগ সকল প্রকার লেবু জাতীয় ফসলের একটি প্রধান সমস্যা। পূর্ণবয়স্ক সাইলিড বাগ সাধারণত

৪৫০ কোণে পাতার উপর বসে পাতার রস চুষে খায় এবং পাতার উল্টো পাশে ডিম পাড়ে। সাইলিড বাগ দ্বারা প্রধানত

লেবু জাতীয় ফসলের গ্রীনিং রোগ ছড়ায়।

দমন ব্যবস্থা: এ পোকার আμমণ দেখা গেলে সাথে সাথেই ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের যেকান কীটনাশক যেমন ইমিটাফ ২০

এসএল প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।

লেবুর প্রজাপতি পোকা: এ পোকার কীড়া পাতা খেয়ে ফেলে। এজন্য ফলন ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

দমন ব্যবস্থা: ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে। সুমিথিয়ন ৫০ ইসি অথবা

লিবাসিড ৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।


পাতা মোড়ানো পোকা: আগস্ট থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ পোকার আμমণ বেশি দেখা যায়। বয়স্ক ও চারা উভয় প্রকার

গাছই এ পোকা দ্বারা আμান্ত হয়। পোকার কীড়াগুলি চারা ও বয়স্ক গাছের কঁচি পাতা মুড়িয়ে তার ভিতর অবস্থান করে

এবং পাতা খেয়ে ক্ষতি সাধন করে।

দমন ব্যবস্থা: এ পোকার আμমণ বেশি হলে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি. প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর

১-২ বার গাছে ¯েপ্র করতে হবে। এছাড়া ফেব্রæয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে প্রধানত গাছের নতুন কুঁড়ি এবং পাতায় জাব

পোকার আμমণ দেখা যেতে পারে। এতে করে আμান্ত নতুন কুঁড়ি এবং পাতা কুঁকড়ে গিয়ে গাছের ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে

আμমণ বেশি হলে ইমিটাফ ২০ এসএল ০.৫ মি. লি. হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার

¯েপ্র করতে হবে।

আগা মরা (ডাইব্যাক): আন্তত গাছের পাতা ঝরে যায় ও আগা থেকে ডালপালা শুকিয়ে নিচের দিকে আসতে থাকে এবং

আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ গাছটিই মরে যায়।

প্রতিকার: পরিচর্যার মাধ্যমে গাছকে সবল ও সতেজ রাখতে হবে। আμান্ত ডালের ২.৫ সেমি সবুজ অংশসহ কেটে কর্তিত

অংশে বর্দোপেস্ট লাগাতে হবে। আμান্ত গাছে বছরে দু’একবার কপার সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক যেমন কুপ্রাভিট-৫০ ডবিউপি

অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে।

গামোসিস: এ রোগের  গাছের কাণ্ড, ডাল বাদামি রং এর হয়ে যায় ও ডালে লাল ফাটল দেখা দেয় ।ডাল থেকে  লাল আঠা বা কস বের হতে থাকে।

প্রতিকার: আক্রন্ত ডাল কেটে ফেলে অথবা আক্রন্ত  অংশ চেচে ফেলে আলকাতরা অথবা বর্দোপেস্ট (১০০ গ্রাম কপার সালফেট বা তুঁতে, ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানিতে গুলিয়ে তৈরি করতে হবে) লাগাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থাকরতে হবে এবং সেচের পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে ও গাছের গোড়ার বাকল স্পর্শ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ক্যাংকার: এ রোগের আক্রন্ত  কচি পাতা, শাখা ও ফলে ধূসর বা বাদামি রংয়ের গুটি বসন্তের মত দাগ পড়ে। লিফমাইনার পোকার দ্বারা এ রোগ সংμমিত হয় এবং ঘন ঘন বৃষ্টি হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

প্রতিকার: আক্রন্ত ডগা ও শাখা ছাঁটাই করতে হবে এবং কাটা অংশে আলকাতরা অথবা বর্দোপেস্ট এর প্রলেপ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুপ্রাভিট-৫০ ডবিøউ পি অথবা কপারঅক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ¯েপ্র করতে হবে। এছাড়া যেহেতু লিফ মাইনারপোকার দ্বারা এ রোগ ছড়ায় সেহেতু ক্ষত সৃষ্টিকারী এই লিফ মাইনার পোকা দমন করার জন্য ইমিটাফ ২০ এসএল প্রতিলিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করে করতে হবে।

ফল সংগ্রহ ও সংগ্রোহত্তর পরিচর্যা

সারা বছরই কাগজী লেবু উৎপনড়ব হয় তবে কাগজী লেবুর ফুল আসার প্রধান মৌসুম হল জানুয়ারি থেকে ফেব্রয়ারি মাস এবং তা থেকে এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা হয়। আবার অনেক সময় জুন-জুলাই মাসেও কিছু ফুল আসে

এবং তা থেকে সেপ্টেম্বর হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। ফলের ত্বক তুলনামূলকভাবে মসৃণ ও ফলের রং গাঢ় সবুজ হতে কিছুটা হালকা হয়ে আসলে ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংগ্রহ করার পর প্রথমে বাছাই এর মাধ্যমে ভাল ও ত্রটিপূর্ণ (বাজারজাতকরণের অনুপযোগী) ফলগুলো আলাদা করা হয়। তারপর ভাল ফলগুলো গ্রেডিং এর মাধ্যমে

বিভিন্ন  সাইজ অনুপাতে ভাগ করে বাজারজাত করা হয়।







Monday, January 24, 2022

ফেরামন ওয়াটার ট্রাপ







ফেরামন ওয়াটার  ট্রাপ|


ফেরামন ওয়াটার  ট্রাপ : ওয়াটার ট্রাপ এক ধরণের প্লাস্টিকের ড্রাম বা বৈয়ম যার ভেতর ফেরোমন তাবিজ লিওর  ঝুলান হয়।



ব্যবহার : ফেরোমন তাবিজ বা ফাঁদ স্থাপনের জন্য এই ওয়াটার ট্রাপ ব্যবহার করা হয়। ট্রাপ বা প্লাস্টিক বৈয়মের ত্রিকোন অংশের মাঝ বরাবর, তার দিয়ে ফেরোমন টোপটি ঝুলিয়ে দিতে হয়। ফুল ও ফল যে উচ্চতায় থাকে ঠিক সেই উচ্চতায় ওয়াটার ট্রাপ দুটি খুঁটির সাহায্যে বেঁধে দিতে হয়। বৈয়ামের ভিতরে ডিটারজেন্ট পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে  কর্তিত অংশ ১ সে.মি. নিচ বরাবর ভর দিতে হয়। ওয়াটার ট্রাপ ব্যবহার করা হয় ফেরোমন ফাঁদ স্থাপনের জন্য।

ফেরামন ওয়াটার  ট্রাপ|

                             

গঠন : উচ্চতা ৮-১০ইঞ্চি ও ব্যাস ৫-৬ ইঞ্চি। মাঝে ত্রিকোনা আকারে কর্তিত থাকে। ঢাকনা উপরে একটি  ফুটা থাকে সুতা দিয়ে তাবিজ বা লিওর ঝুলানোর জন্য।



ফেরোমন

ফেরোমন একটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ phero বহন করা এবং হরমোন, প্রাচীন গ্রীক impetus হচ্ছে নিঃসরিত হওয়া রাসায়নিক বস্তু। যা একই প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে একটি সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফেরোমন হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ যা স্বতন্ত্র ভাবে শরীরের বাইরে ক্ষ্ররিত হয় এবং হরমোনের মতো আচরন করে, যারা এটি গ্রহণ করে তাদের উপরও এটি স্বতন্ত্র ভাবে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন এলারম ফেরোমন, ফুড ট্রেইল ফেরোমন, সেক্স ফেরোমন ইত্যাদি আছে। এছাড়া আরো অনেক ফেরোমন আছে যারা শরীরে ও স্বভাবে প্রভাব ফেলে।ফেরোমন এককোষী আদিকোষ থেকে জটিল বহুকোষী প্রকৃত কোষে ব্যাবহৃত হয়। পতংগে ফেরোমনের ব্যাবহার বেশ ভালোভাবে গবেষণা থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে অধিকন্তু কিছু ভাটিব্রাটা, উদ্ভিদ এবং সিলিয়াট ফেরোমন ব্যাবহার করে।
ফেরোমন একটি পোটেম্যান্টিউ শব্দ।১৯৫৯ সালে পিটার কালসন এবং মাট্রিন লুসচার গ্রীক শব্দ ফেরো(আমি বহন করি) হরমোন Stimulating কে সমন্বয় করে এই নাম রাখেন।


ফেরোমন কি?

ফেরোমন হলো একধরনের পদার্থ যা বিভিন্ন প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ তাদের শরীর থেকে নিগৃত ককরার মাধ্যমে ঐ প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের আচার -আচরনকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেরোমন ব্যাবস্থপনা প্রানীদের তুলনায় কীটপতঙ্গে অনেক সহজ। কীটপতঙ্গ ফেরোমন ব্যাবস্থপনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য আদান-প্রদান এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।


ফেরোমনের প্রধান শ্রেণি সমুহঃ-
১.Aggregation (সমাহার) ---Alarm(বিপদ সংকেত)
২.Epideictic (নিদের্শক)Territorial(এলাকা নিধারক)
৩.Trail Marking ( চিন্হ রেখা)-Sex(যৌন প্রজনন).


সেক্স ফেরোমন কি?
সেক্স ফেরোমন হলো একটি নিদিষ্ট গন্ধযুক্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা স্ত্রী পোকার শরীর হতে নিঃসৃত হয় এবং সেই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ পোকা স্ত্রী পোকার নিকটে চলে আসে ও তাদের যৌন মিলন হয়। বতমানে এই নিদিষ্ট গন্ধযুক্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হচ্ছে যার দ্বারা সৃষ্ট টোপ ব্যাবহার করে পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের সাহায্যে মেরে ফেলা হয়।ফলশ্রুতিতে পুরুষ পোকার অনুপস্থিতির কারনে স্ত্রী পোকার যৌন মিলন সম্পন্ন হয়না বিধায় তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।

বায়ো- পেস্টিসাইড বা জৈব বালাইনাশক হলো বিভিন্ন বালাই দমনের এমন একটি মাধ্যম যেটি বিভিন্ন অনুজীব এবং জৈব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

জৈব বালাইনাশক তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত--
১. জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক
২.অনুজীব জৈব বালাইনাশক
৩.পি,আই,পি(প্লান্ট ইনকপোরেটেড প্রটেক্টযান্টস)

জৈব রাসায়নিক বালাইনাশকঃ-
জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক হলো প্রকৃতিগতভাবে উদ্ভুত উপাদান অথবা রাসায়নিক উপাদান যা গঠনগতভাবে জৈব উপাদানের সম্পুর্ন অনুরুপ। সাধারণত জৈব রাসায়নিক জৈব বালাইনাশক অবিষাক্ত পদ্ধতিতে /ভাবে কাজ করে যা বালাই সমুহের গঠন ও বদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা এবং বাস্তুসস্থান প্রভাবিত করে।এই ধরনের জৈব বালাইনাশকের উদ্ভিদের গঠন ও বৃদ্ধিতেও উপকারী ভুমিকা রয়েছে।জৈব রাসায়নিক জৈব বালাইনাশকে বেশ কয়েকটি শ্রেনিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১.সেমি কেমিক্যাল

ক.ফেরোমন
খ.এলিলোকেমিক্যাল
২.হরমোন
৩.ন্যাচারাল প্লান্ট রেগুলেটর এবং ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর
৪.এনজাইম
৫.বোটানিক্যাল


অনুজীব জৈব বালাইনাশকঃ
বিভিন্ন ধরনের স্পোর বা অনুজীব উতপাদনকারী অনুজীব হতে উদ্ভুত উপাদানই অনুজীব জৈব বালাইনাশক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। অনুজীব জৈব বালাইনাশককে পাচ ধরনের শ্রেনীতে ভাগ করা যায়।
যথাঃ

১.ব্যাকটেরিয়াজাত.
২.ছত্রাকজাত.
৩.প্রোটোজোয়াজাত.
৪.ভাইরাসজাত.
৩.পি.আই.পিঃ
পি. আই.পি জেনেটিক উপাদান যা নিদিষ্ট প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক উপাদান হিসাবে প্রবেশ করানো হয় তবে এর ব্যাবহার বিতকিত।




ধন্যবাদ সকলাকে

লালশাকের পুষ্টিগুণ

 

লালশাকে উপকারিতা।

লালশাক দেখতে লালচে - গোলাপি ধরনের হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ এই শাক। আমাদের দেশে অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক এর তুলনা মেলা ভার। এই লাল শাক আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে সবচেয়ে বেশি । খাবার চিবাতে পারে এমন শিশুদের জন্য লালশাক ভীষণ উপকারী। কারণ, শিশুদের আয়রন, আয়োডিন দরকার হয় প্রচুর পরিমাণে।



আর লালশাক আয়রনের উৎকৃষ্ট উৎস। আস্তে আস্তে শিশুর পেটের ও হজমশক্তির অবস্থা বুঝে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাড়ন্ত শিশু, পূর্ণ বয়স্কদের জন্যও বয়ে আনে সুফল। অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো - ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়া, ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা।গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ জরুরি।



তবে এখানেও খেয়াল রাখা দরকার, বেশির ভাগ গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তাই দুপুরে শাক খাওয়াই ভালো। কারণ, ইনটেসটাইন, অর্থাৎ খাবার হজমকারী জরুরি নালিবিশিষ্ট অঙ্গ অধিক রাতে কাজ করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে বেশি। আর রাতে শাক পরিহার করাই ভালো।মেনোপোজ, মানে মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া।



মেনোপোজ হওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে আসে। ত্বক ও চুলে আসে বৈরী ভাব। ভঙ্গুর হতে থাকে নখ। শরীরে দেখা যায় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। লালশাক এ অবস্থায় হতে পারে উপকারী বন্ধু। দেহে রক্ত বাড়াবে আর ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগাবে। পুষ্টিমূল্য বিচারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্যই লালশাক উপকারী।

ধন্যবাদ সকলকে

আমিন

কৃষি পরামর্শ Group

Sunday, January 23, 2022

পার্থেনিয়াম

 পার্থেনিয়াম The Silent Killer



ছবি : পার্থেনিয়াম গাছ ।

পার্থেনিয়াম' সূর্যমুখী উপজাতির, যার জন্ম মেক্সিকোতে । বর্তমানে উত্তর আমেরিকা, চীন, নেপাল হয়ে ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। পার্থেনিয়াম, যা হিন্দিতে "গাজর ঘাস" নামে পরিচিত, ভারতের সবচেয়ে আক্রমণকারী উদ্ভিদ প্রজাতি ।

মানুষের উপর পরাগের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে। হাওয়ার মাধ্যমে এটি মানুষের সংস্পর্শে আসে এবং ডার্মাটাইটিস, জ্বর, হাঁপানি, এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো বিভিন্ন বড় বড় রোগ ও এলার্জির সৃষ্টি করে। এই আগাছাতে পাওয়া সাধারণ অ্যালার্জেনগুলি হল- পার্থিনিন, করোনোপিলিন, টিট্রেনানিরিস এবং এমব্রোসিন। পার্থিনিয়াম গাছ খাওয়ার ফলে পশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয় । গরু, মোষ, ছাগলের দুধের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে । পার্থেনিয়াম বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেললে গবাদি পশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।


রাস্তা ও ক্ষেতের চারপাশে এগুলো প্রচুর পরিমানে দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলো যে কোনো ফসলের পক্ষে খুবই খারাপ। চাষীদের জন্য এ উদ্ভিদের একটিমাত্র ভালো দিক হল- ফুল হবার আগেই খুব সাবধানে এই গাছ কেটে গোবর ডোবায় দিলে গোবর সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে যা ফসলের পক্ষে উপকারী ।

এবার দেখা যাক_কীভাবে এই গাছ ধ্বংস_করা যায়
গাছের গায়ে কেরোসিন স্প্রে করলে গাছ খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। তবে এতে অনেক অসুবিধা আছে, যেমন- পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ, কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে জল নষ্ট হবে।
তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপায় হলো ৪ থেকে ৫ লিটার জলে ১ কেজি নুন ভালো করে মিশিয়ে গাছের পাতায় ও গোড়াতে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করলে ২ দিনের মধ্যে সব মারা যাবে।


কিছু_সাবধানতা
১. গাছে কোনো ভাবেই হাত দেবেন না এবং বাচ্চাদের দূরে রাখুন।
২. পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে সবসময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে থাকবেন। এছাড়া ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট বা ট্র্যাকসুট পরে থাকা ভালো।
৩. সাফাইয়ের পর জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন ও নিজে স্নান করে বাড়িতে ঢুকবেন।
সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ আপনার নিজেদের চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখুন ও নিজে সুস্থ থাকুন ।


ধন্যবাদ সবাইকে

Sunday, January 16, 2022

টমেটোর পচন

টমেটোর পচন।


টমেটোর পচন দেখা দিলে ।


   টমেটোর পচন দেখা দিলে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নীরোগ বীজ ব্যবহার করে চারা তৈরি করতে হবে। শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে। 

রোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে একরোবেট এমজেড (ম্যানকোজেব+ডাইমেথোমরফ্) ০৪গ্রাম/লিটার বা হেডলাইন টিম (পাইরাক্লস্ট্রাবিন+ডাইমেথোমরফ্) ২.৫০গ্রাম/লিটার বা হেমেনকোজেব বা রিডোমিল গোল্ড বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রভৃতি ০৪গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।


Tuesday, January 11, 2022

বিষাক্ত ইথিফন দিয়ে পাকানো হচ্ছে টমেটো।

 আমারা কি খাচ্ছি?0

রাজশাহীতে বিষাক্ত ইথিফন দিয়ে পাকানো 

হচ্ছে টমেটো 🍅🍅🍅🍅🍅


মেহেদী হাসান, রাজশাহী: দেখে মনে হতে পারে কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ চলছে। মোটা পলিথিন পেপারের উপর অপরিনত কাঁচা টমেটো ছড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকজন। এরপর স্প্রে মেশিন দিয়ে টমেটোর উপর কুয়াশার মতো ছড়িয়ে দিচ্ছে ইথিফন। এতেই সবুজ টমেটো হয়ে উঠছে লাল টুকটুকে। সেগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার উদ্যেশ্যে হচ্ছে প্যাকেট। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এভাবেই বিষাক্ত ইথিফন দিয়ে পাকানো হচ্ছে টমেটো; ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশ।


কৃষিদ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, ইথিফন ব্যবহারের ফলে টমেটোর পুষ্টিগুণ আগের মতো থাকেনা। এছাড়া অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন বিপাক-সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়ে।


সরেজমিনে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ীহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সময়ের আগে জমি থেকে কাঁচা টমেটো তুলে নেওয়া হচ্ছে।এসব কাঁচা কিংবা অপরিনত টমেটো দ্রুত পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক ইথিফন। পচন রোধ করতে টমেটোতে ছিটানো হচ্ছে কিছু ছত্রাকনাশক। বর্তমান বাজারে কাঁচা টমেটোর পাইকারি বাজার বেশ নিন্মগামী। ফলে পাকা টমেটো থেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তারা। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।


কথা হয় আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, বাজারে কাঁচা টমেটো খায় না। আর পাইকারিতে কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা। আর একটু পাকলে ৮’শ টাকা থেকে মানভেদে হাজার টাকা মণও বিক্রি হয়। তাই পাকানোর ঔষধ ব্যবহার করি। শুধু আমি নই, এই এলাকায় যত চাষি আর ব্যবসায়ীরা আছে সবাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করি।

তিনি আরো জানান, শীত মৌসুমে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার টমেটো যায়। পাকানোর জন্য এবং লাল রং করার জন্য টমেটোতে ইথিফন ও অন্যান্য ছত্রাকনাশক জাতীয় রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। বাজারে টমেটো পাকানোর জন্য হরমন কিনতে পাওয়া যায়। মেশিনের সাহায্যে এসব স্প্রে করা হয় টমেটোতে। এরপর একদিন রোদে শুকিয়ে খড়, পলিথিন দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়। ‘জাগ’ দিয়ে এভাবে দু-তিন দিন ঢেকে রাখার পরে আবার সেগুলো রোদে শুকানো হয়। তাহলেই লাল টুকটুকে হয়ে উঠে।


গোদাগাড়ী রাজাবাড়ী এলাকার কৃষক শান্ত রহমান বলেন, জমিতে টমেটো পাকানো খুব কষ্টকর। বাণিজ্যিকভাবে টমেটো বিক্রির জন্য একসাথে পাকানো জরুরি। জমি থেকে সব টমেটো কাঙ্খিতভাবে উত্তোলন সম্ভব নয়। আর জমিতে পাকা টমেটো বাজারজাত করতে গেলে গলে যাবে। এছাড়াও শীতের কারণে টমেটো পাকতে দেরি হয়। গাছে পাকা টমেটো পাখিতে খেয়ে ফেলে। কাজেই কাঁচা টমেটো পাকাতে হরমন জাতীয় কীটনাশক মেশাতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বিষ দিয়ে টমেটো পাকানো হয় একদিকে বেশি দাম পাওয়ার জন্য; অন্যদিকে বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য। স্বাভাবিকভাবে ১০ দিনেও পাকবে না টমেটো।


এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, রাজশাহীতে এবার ৩৬’শ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৯’শ হেক্টর চাষ হয়েছে গোদাগাড়ীতে। জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিকটন।


ইথিফন দিয়ে টমেটো পাকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইথিফন কোম্পানিগুলো হরমন হিসেবে বিক্রি করে। মূলত এটি একটি অর্গানোফসফরিক গ্রুপের কীটনাশক। অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহারে বিপাকীয় সমস্যা, পেটের পীড়া কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। তবে, কৃষকরা যে পরিমাণে ব্যবহার করেন তাতে কোন সমস্যা হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক নাজমা শাহীন বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে নির্দিষ্ট রাসায়নিক ব্যবহার করে ফল পাকিয়ে বাজারজাত করা হয়। ইথোফেন ব্যবহার করে ফল পাকালে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না। এটি একধরণের গ্যাস যা ফলের ভেতরের এনজাইমকে প্রভাবিত করে যার ফলে দ্রুতবেগে ফল পাকে।


তিনি আরোও বলেন, উন্নত বিশ্বে বর্তমানে ইথোফেন চেম্বারে ফল রাখা হয়। সেই ফল বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নেয়ার পথে সাধারনত পেকে যায় ও খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে, কার্বাইড দিয়ে ফল পাকালে আর্সেনিক বা ফসফরাসের অবশিষ্টাংশ ফলে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এজন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ফল পাকানোর কাজে কার্বাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


এগ্রিকেয়ার/এমএইচ

Tuesday, January 4, 2022

ট্রাইকোডার্মা

ট্রাইকোডার্মা |

ট্রাইকোডার্মা কোথায়,কিভাবে ব্যবহার করবেন।

ট্রাইকোডার্মা হল হিপোক্রিসি পরিবাররে একটি প্রজাতির  ছত্রাক যা মাটিতে বসবাস করে। ১৭৯৪ সালে ক্রিস্টিয়ান হেনড্রিক পার্সুন  ট্রাইকোডার্মা  শ্রেণী ও এটা  নিয়ে প্রথম আলোচনা করন।

গাছের ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে বায়োকন্ট্রল হিসাবে উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি কৃষি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে  ব্যবহার হয়ে থাকে নিম্নে কৃষি ক্ষেত্রে ট্রাইকোডার্মা এর ভুমিকা আলোচনা করা হলো। ট্রাইকোডার্মা উপযুক্ত জৈব (ছত্রাক ও নেমাটোড) নিয়ন্ত্রক। রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাকের গোত্র ফিউজিরিয়াম, পিথিয়াম রাইজোকটনিয়া, ফাইটোপথোরা প্রভৃত দমন করে। মাটিবাহিত রোগ দমনে অধিক ব্যবহার হয়।


ট্রাইকোডার্মা একটি উপকারী ছত্রাক। যা উদ্ভিদকে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
ট্রাইকোডার্মা মাটিতে জন্মানো রোগ থেকে ফসল, শাকসবজি রক্ষা করার জন্য খুব কার্যকরী জৈবিক অনুজীব।
এটি একটি মুক্ত জীবিত ছত্রাক যা মাটি ও মুলের ইকোসিস্টেম গুলিতে জন্মায়। এটি মুল, মাটি এবং পাথরের পরিবেশে অত্যান্ত কার্যকর। এটি এন্টিবায়োসিস, মাইকোপারসিটিজম হাইফাল ইন্টারঅ্যাকশন এবং এনজাইম নিঃসরণের মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগজীবাণু বৃদ্ধি বা সংক্রমণ হ্রাস করে,
তারা এমন একটি বাধা তৈরি করে যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং প্যাথোজেনগুলির কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করে।
ট্রাইকোডার্মা প্রকৃতি থেকে আহরিত এমনই একটি অনুজীব যা জৈবিক প্রদ্ধতিতে উদ্ভিদের রোগ দমনের জন্য ব্যবহার করা যায়। ফলে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যাবহার কমবে ৪০-৬০ শতাংশ। এটি ট্রাইকো সাসপেনশন পাউডার এবং পেষ্ট আকারে উৎপাদন সম্ভব। নিয়মানুযায়ী স্প্রে করলে এর অতি উত্তম কার্যকারিতা পাওয়া যায়।
প্রকৃতি ও মাটিতে বসবাসকারী হওয়ায় একবার ব্যাবহারের ফলে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ীভাবে থেকে যায়, পচা আবর্জনায় ট্রাইকো- সাসপেনশন এর জলীয় দ্রবণ মিশিয়ে দ্রুত সময়ে ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন করা সম্ভব।

ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলোঃ
১.ট্রাইকোডার্মা হারজিআম
২. ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি
৩. ট্রাইকোডার্মা লঙ্গিব্রাচিয়াটাম
৪. ট্রাইকোডার্মা রিসেই


এগুলোর প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলী রয়েছে।

বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশের স্থানীয় মাটিতে জৈবিক ভাবে ট্রাইকোডার্মা পাওয়া যায়। এগুলো বিভিন্ন তাপমাত্রার মাটিতে পাওয়া যায়। তবে ৭৭-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের ট্রাইকোডার্মা ছত্রাক পাওয়া সম্ভব। এই তাপমাত্রার বাইরে ছত্রাকটি ততোটা কার্যকরী হয়না।
ট্রাইকোডার্মা অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক, এটির অভিযোজন ক্ষমতা অতুলনীয়। যেকোনো ভারী ধাতু এবং ব্যাকটেরিয়ায় এরা দিব্যি বেচে থাকতে পারে। মাটি খনন, অবকাঠামো নির্মান,কীটনাশকের অধিক ব্যাবহার,খরা,বন্যা এবং প্রচন্ড উত্তাপের ফলে উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
প্রাকৃতিকভাবেই এটি মাটি থেকে সৃষ্ট রোগ থেকে এটি ফসলকে নির্মূল করছে।৷
তাই এটিকে ল্যাবরেটরিতে এনে জার্মিনেশন ঘটিয়ে বায়োকম্পোস্ট এবং বায়োফার্টিলাইজার তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ট্রাইকোডার্মার পেক্ষাপটঃ-
# ট্রাইকোডার্মা বায়োপেস্টিসাইড বাংলাদেশের উপযোগী করে সর্বপ্রথম আবিস্কার করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ বাহাদুর মিয়া, বগুড়ার আর ডি এ ল্যাবের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রের উপযোগী করে বাজারে নিয়ে আসা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৭ টির মতো পুনাঙ্গ ল্যাবে ট্রাইকোডার্মা উৎপাদন করে বানিজ্যিক ভাবে বায়োপেস্টিসাইড ও কম্পোস্ট। এটি ব্যাবহারে ৪০- ৬০ ভাগ রাসায়নিক সারের ব্যাবহার কমায়। ট্রাইকোডার্মা সাসপেনশন থেকে তৈরি বায়োপেস্টিসাইড ব্যাবহারে কীটনাশকের খরচ কমায় ৩০ ভাগ পর্যন্ত।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ববিভাগের অধ্যাপক আ ফ ম জামালউদ্দিনের গবেষণায় দেখা গেছে ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগকৃত টমেটোর ১.৫ গুন ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ট্রাইকোডার্মা একই সাথে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকের খরচ কমাচ্ছে। এজন্য ট্রাইকোডার্মা কম্পোস্ট ও বায়োপেস্টিসাইড শহরের ছাদ বাগানে টেকসই অর্গানিক ফার্মিংকে আরো বাস্তবায়ন ঘটাতে একটি উপলক্ষ হতে পারে।

ট্রাইকোডার্মার উপকারিতাঃ-

১. রোগ নিয়ন্ত্রণে -
ট্রাইকোডার্মা একটি শক্তিশালী বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট এবং মাটিতে জন্মানো রোগের জন্য ব্যাপকহারে ব্যাবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন প্যাথোজনিক ছত্রাক যেমন- ফিউজেরিয়াম, ফাইটোপথেরা, সে্ক্লেরেশিয়া এর বিরুদ্ধে সফলভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে।

২. উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে সহায়ক-
ট্রাইকোডার্মা ফসফেট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টকে পানিতে দ্রবীভুত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ট্রাইকোডার্মা উদ্ভিদে প্রয়োগের ফলে এর গভীরে শিকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় ফলে খরা প্রতিরোধী করতে উদ্ভিদের ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

৩. রোগের জৈব রাসায়নিক এজেন্ট -
ট্রাইকোডার্মা ফসলের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভাবিত করতে সহায়তা করে। ট্রাইকোডার্মা দ্বারা উৎপাদিত তিনটি শ্রেণির উদ্ভিদের প্রতিরোধী ক্ষমতা প্ররোচিত করার সক্ষমতা এখন বহুল আবিষ্কৃত। এই যৌগগুলি প্রয়োগকৃত গাছের ইথিলিন, উচ্চসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ায় সাড়া প্রদান ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করে।

৪.ট্রান্সজেনিক গাছপালা-
ট্রাইকোডার্মার এন্ডোকাইটিনেজ জিংক তামাক এবং আলু গাছের ছত্রাকের বৃদ্ধির প্রতিরোধী ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। অলটারনারিয়া, অল্টানাটা সোলানী এবং বোট্টিটিস সিরেরিয়া বিভিন্ন মাটিবাহিত রোগজীবাণু রিজেক্টেনিয়া এস পি পি তে যেমন পাতাগুলি প্যাথোজেনগুলির পক্ষে সহনশীল।

৫. জৈব প্রতিষোধক-
কীটনাশক ও ভেষজনাশক দ্বারা দুষিত মাটির জৈব শোধনে ট্রাইকোডার্মা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং অপ্রয়োজনীয় কীটনাশকের ব্যাবহার হ্রাস করে।

৬. মাটির বিষক্রিয়া হ্রাস-
ট্রাইকোডার্মা মাটিতে কেমিক্যাল ও কীটনাশকের আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা কমাতে সাহায্য করে এবং একইসাথে মাটির অম্লতা ও পি এইচ এর মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে।

৭. মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা -
মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং উর্বর শক্তিকে দীর্ঘস্হায়ী করে ফলে মাটি পুষ্টি সমৃদ্ধ হয় ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।


ট্রাইকোডার্মার উপকারিতাঃ

# মাটি ও বীজবাহিত রোগের ক্ষতিকর জীবানু ধ্বংস করে মাটি ও বীজকে শোধন করে।
# মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সু- রক্ষায় সহায়তা করে ও উর্বরতা শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করে ফলে মাটি পুষ্টি সমৃদ্ধ হয় ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
# জমিতে কেমিক্যাল সার ও কীটনাশকের আধিক্যজনিত কোন বিষক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা কমাতে সাহায্য করে ও একই সাথে মাটির অম্লতা ও পি এইচ এর মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে।
# মাটিতে অবস্থিত অজৈব পদার্থকে উদ্ভিদের খাদ্যে পরিনত করতে সহায়তা করে ও মাইক্রো অর্গানিজম এর অধিক বৃদ্ধি করে গন্ধক দস্তা প্রভৃতির ঘাটতি দুর করতে সহায়তা করে।
ফলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
# মাটিতে পানির ধারন ক্ষমতা বাড়িয়ে ফসল সতেজ রাখে।
# সঠিক মাত্রায় ব্যাবহারে ফসলে ৩০- ৪০ ভাগ পর্যন্ত রাসায়নিক সারের ব্যাবহার সাশ্রয় করে।


প্রয়োগ মাত্র ও প্রয়োগক্ষেত্র : ধান, গম, আলু, আম, ইক্ষু, বেগুন, পিঁয়াজ, কুমড়া, শাশা, পটল, করল, চিচিংগা, ঝিংগা, ঢেঁড়স,বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচ, পান, আনারস, কলা, তরমুজ, তুলা, চা এবং ফুল জাতীয়া ফসল।


বীজ শোধন : প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩০ গ্রাম   ট্রাইকোডার্মা পাউডার বীজের সাথে মিশিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে বপন করতে হবে।

চারা শোধন : প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম   ট্রাইকোডার্মা পাউডার পানিতে মিশিয়ে চারার গোড়া ৩০ মিনিট চুবিয়ে রেখে চারা রোপন করতে হবে।


রোগ দমন :   ট্রাইকোডার্মা পউডার পঁচন, ঢলে পড়া, বীজ শোধন, ডাউনি-পাউডার, মিলডিউ ও সিগাটোগা ব্যবস্থপনায় ব্যবস্থাপনায় কার্যকর।


উদ্ভিদির বৃদ্ধি বর্ধন : * ফসফেট, আয়রন ও অন্যান্য  অনুখাদ্য (মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট) উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসে।


* হরমোন, অক্সিন ও ইনডোল-৩-এসিটিক এসিড  তৈরি করে যা শিকড় বৃদ্ধি ঘটিয়ে পুষ্টি ও পানি গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলশ্রতিতে খরা সহনশীলতা ও ফলন বৃদ্ধি পায়।

* বীজের অংকুরোদগমের হার বৃদ্ধি করে।

* পাতার বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদে সালোক-সংশ্লেষণের হার বৃদ্ধি করে।


জৈব প্রতিবিধায়ক : * অর্গানোক্লোরিন, অর্গানোফসফেট ও কার্বোনেট জাতীয় বালাইনশকের অবশিষ্টাংশ ভেঙ্গে ফেলে। * মাটির গঠন ও পানি ধারন ক্ষমতার উন্নতি সাধন করে।


মাটি শোধন : একর প্রতি ২ কেজি   ট্রাইকোডার্মা পাউডার ২০০-৩০০ কেজি জৈব সারের (লক্ষ রাখতে হবে জৈব সার ভেজা ভেজা থাকে) সাথে মিশিয়ে রেখে ৭-১০ দিন পর জমিতে শেষ চাষে প্রয়োগ করুন।

আক্রন্ত গাছ : প্রতি লিটার পানিতে ৩-৫ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে গাছের গোড়াসহ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।


সতর্কতা :  ট্রাইকোডার্মা ব্যবহারের ৩-৭ দিন পূর্বে এবং পরে কোন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। শুষ্ক শীতল ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করুন।


আরো পড়ুন ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য|


ধন্যবাদ সকলকে

আমিন

কৃষি পরামর্শ Group


Last post

ড্রাগন ফলের পরিচয়

  উৎপত্তি ও ভৌগলিক বিস্তৃতিসহ ড্রাগন ফলের পরিচয়     " ড্রাগন ফল " বা ড্রাগন ফ্রুট অসমৃদ্ধ এবং বিশেষ রূপের ফল , য...